অন্ধ্র প্রদেশে পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু
2015.07.14
আরও এক বার পুণ্য অর্জনের আনন্দউৎসব পরিণত হল মৃত্যুর মিছিলে। অন্ধ্র প্রদেশের রাজামুন্দ্রিতে মহাপুষ্করম উৎসবের প্রথম দিন পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেন অন্তত ২৭ জন। আহত শতাধিক।
গত শুক্রবার, ১০ জুলাই, বাংলাদেশের ময়মনসিংহে পবিত্র ঈদ উপলক্ষে জাকাতের কাপড় বিলির সময় হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ২৭ জন। রাজামুন্দ্রির দুর্ঘটনা ময়মনসিংহের স্মৃতি উসকে দিল। মনে পড়িয়ে দিল ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে মধ্য প্রদেশে ১১০ জনের মৃত্যুর কথাও।
আজই মহাপুষ্করম উৎসবের প্রথম দিন। হিন্দুদের একাংশের বিশ্বাস, এই দিনে গোদাবরীর জলে ডুব দিলে সব পাপ মুছে যায়। ফলে, অসংখ্য মানুষের ঢল নেমেছিল জনপ্রিয় পুষ্কর ঘাটে। সপরিবার উপস্থিত ছিলেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি নদীর জলে ডুব দিয়ে চলে যাওয়ার পরই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘড়িতে তখন সকাল আটটা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ভিড়ের চাপে পায়ের চটি খোয়া যাওয়ায় তা খুঁজতে নিচু হয়েছিলেন কয়েক জন। পিছন থেকে আসা জনতার চাপ তাঁরা সামলাতে পারেননি। তার পরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনাটি প্রায় কুড়ি মিনিট স্থায়ী হয়।
অভিযোগ উঠছে, এই উৎসবে যে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ গোদাবরীর জলে ডুব দিতে জড়ো হবেন, এবং সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে পুষ্কর ঘাটের ওপরই, জানা সত্ত্বেও প্রশাসন যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুর্ঘটনার পর অ্যাম্বুল্যান্স আসতেও প্রভূত দেরি হয়, কারণ জনতার ঢল সামলাতে না পারায় অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য রাস্তা খালি ছিল না।
অন্ধ্র প্রদেশ পুলিশের এক পদস্থ কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, অভিযোগটি ভিত্তিহীন নয়। সত্যিই এত বড় জমায়েত সামলানোর মতো পরিকাঠামো রাজামুন্দ্রির মতো ছোট শহরে নেই। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের অন্য প্রান্ত থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী এনে কি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত না?
অন্ধ্র প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে শ্রীনিবাস রাও অবশ্য মানতে রাজি নন যে প্রশাসনিক প্রস্তুতির অভাব ছিল। তিনি বলেছেন, সমস্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পর এবং মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং নজর রাখার পরও এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আহতরা যখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, শিশু-মহিলারা ভয়ে চিৎকার করছেন, সাহা্য্য চাইছেন, তখন উপস্থিত পুলিশকর্মীরা অসহায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই বিপুল ভিড় সামলানোর সামর্থ্য তাঁদের ছিল না। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে অন্তত ঘণ্টাখানেক সময় লাগে পুলিশের।
সমাজবিজ্ঞানের গবেষক অমৃতা গুপ্ত বললেন, ধর্ম নিয়ে মানুষের মনে হরেক অন্ধ বিশ্বাস থেকে গিয়েছে। নদীতে ডুব দিলে পাপ মুছে যায়, অথবা উৎসবের প্রথম দিন স্নান করতে পারলে বেশি পুণ্য অর্জন করা যায়, এমন ভিত্তিহীন ধারণাই মানুষকে এই বিপদের পথে টেনে আনে। দুঃখজনক মৃত্যু, অবশ্যই। কিন্তু, প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর না হলে এমন ঘটনা যে আরও ঘটবে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সে কথা বলা যায়।
অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু টুইটারে লেখেন, “এতগুলি জীবনহানি অত্যন্ত দুঃখজনক... পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছে। আমি অনুরোধ করছি, আতঙ্ক ছড়াবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। একটি নির্দিষ্ট ঘাটে ভিড় না বাড়িয়ে অন্যান্য ঘাটগুলিতে যান।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও টুইটারে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্ধ্র প্রদেশ সরকার।