পুলিশের উপর চলছে আক্রমন, পশ্চিম বাংলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি
2015.06.29

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি এগিয়ে না আসে রাজ্যের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে যাবে।
পশ্চিম বাংলার ক্ষমতাসীন দলের কর্মিরা স্বার্থোদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে বারবার। খবর স্থানীয় গণমাধ্যমের।
রাজ্যের পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে সাম্প্রতিক কালে ধারাবাহিক হামলার মুখে পড়ে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই নিয়ে নিশ্চুপ থাকায় চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
গত সপ্তাহের ঘটনা, সংঘবদ্ধ হয়ে একদল লোক কলকাতার বাগুইয়াটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ৩ পুলিশ সদস্যকে মারধর করে। স্থানীয় মাছের বাজারে মদ্যপান ও জুয়ার অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেফতারের পরই তারা থানা আক্রমন করে। স্থানীয় মিডিয়া খবর দেয়, গ্রেফতারকৃতরা তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত মার্কেট কমিটির সদস্য।
সোমবারের ঘটনাটি ছিলো এরকম আরো কিছু ঘটনার ধারাবাহিকতায় একটি।পশ্চিম বঙ্গে যা প্রায় নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের পুলিশ আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে।
অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা টি দাস বেনার নিউজকে বলেন, “যারা আমাদের সুরক্ষা দেবার কথা তারা এখন কার্যত নিজেদের আত্নরক্ষার পর্যায়ে চলে গেছে”।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এখানে উল্লেখ করার মতো।
গত ২৫ মে একদল লোক হাওড়া জেলার সান্ত্রাগাছি থানায় জুতা ও ঝাড়ু নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়।
একইদিন মালদাহ রেল স্টেশনে রেলওয়ে রক্ষি বাহিনীর এক সদস্যকে হকার বিরোধী অভিযান চলাকালে হকাররা পাথর নিক্ষেপ করলে মারাত্নকভাবে আঘাত পেয়ে তিনি মারা যান।
এরপর দিন, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় দুই পুলিশ সদস্য স্থানীয়দের আক্রমনের শিকার হয় তাদের অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেবার সময়।
এপ্রিলে হুগলি জেলার চাম্পাদানি পুলিশ ফাড়িতে অন্তত ৫ জন পুলিশ আক্রমনের শিকার হয়ে আহত হন এবং কয়েকটি গাড়ি ভাংচূর করা হয়। তৃণমূলের কাউন্সিলর বিক্রম গুপ্তের নেতৃত্বে একটি গ্যাং এই আক্রমন চালায়। গুপ্তের রাগের কারণ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছিলো বলে পুলিশ তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে।
এপ্রিলে কলকাতার গিরিশ পার্কে নির্বাচনী ডিউটি পালনকালে এক পুলিশ স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা গোপাল তিওয়ারীর গুলিতে বুকে গুলিদবিদ্ধ হন।
গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তর ২৪ পরগানা জেলার নোয়াপাড়া থানা থেকে টিএমসির সাবেক কাউন্সেলর চন্দ্রভান সিং তার দলবল নিয়ে তাদের দলীয় এক সহকর্মিকে ছিনিয়ে আনে।
গত নভেম্বরে আলিপুর থানার পুলিশ টেবিলের নীচে মাথা লুকায় যখন টিএমসি নেতা প্রতাপ সাহা তার দলের লোক নিয়ে থানা আক্রমন করে। পুলিশের দখল-পুনরুদ্ধার অভিযানের প্রতিবাদে তারা এই আক্রমন চালায়। পুরো ঘটনা তখন কয়েকটি চ্যানেলে লাইভ দেখানো হয়।
অবস্থা এতই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল অঞ্জু শর্মা গত সপ্তাহে প্রেস কনফারেন্স করে বলতে হলো, পশ্চিম বঙ্গের পুলিশ সাহস হারিয়েছে, কথাটা ঠিক নয়।
কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এই দাবিকে শুন্যগর্ভ বলে বাতিল করে দেন।
অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পুলিশ কমিশনার ডি আইচ বলেন, পুলিশের উপর এই অব্যাহত হামলার জন্য ক্ষমতাসীন দলকেই দায়ী করতে হবে।
তিনি বেনার নিউজকে বলেন, “ নিঃসন্দেহে উপর থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই এই আক্রমন চলছে। মূখ্যমন্ত্রী তার দলের একটি লোকের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেন নি”।
কর্মকর্তারা মুখ বন্ধ রেখে কাজ করছে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলকাতা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটা আমাদের জন্য একটা কঠিন সময়।এটা নিশ্চিত সব সময় পুলিশের উপর রাজনৈতিক চাপ রয়েছে, আগেও ছিলো।কিন্তু এই সময় আরো কঠিন চাপ চলছে”।
তিনি জানান, “ আগে আমরা জানতাম, কে স্থানীয় নেতা, একজায়গায় মীমাংসার একটা ব্যবস্থা ছিলো। এখন প্রত্যেকে আইন তাদের নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাদেরকে সুরক্ষা দিচ্ছেন, তাই আমরা কাউকে ধরতে পারছিনা”।
কঠিন হুশিয়ারি
দল নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে যদি শিঘ্রই ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে অবস্থা আর খারাপের দিকে যাবে।
তারা বলেন, “যদি দলের নেতারা ও মূখ্যমন্ত্রী কার্যকর ব্যবস্থা না নেন, আইন শৃংখলা পরিস্থিতির আর অবনতি ঘটবে। পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যই প্রথম হাত ফস্কে বেরিয়ে যাবে যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিকারের ব্যবস্থা না নেন, অচিরেই চরম মূল্য দিতে হবে”।
টিএমসি থেকে অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, দলের সেক্রেটারি জেনারেল পার্থ চাটার্জি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজ্যে সবকিছু ঠিকমত চলছে। বিরোধী দল এবং মিডিয়ার একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠি সরকারের বদনাম করার জন্য নানা রকম রটনা ছড়াচ্ছে।