হাইকোর্টে ছয় জেএমবি জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল,দুজনের কারাদণ্ড
2016.07.28
এগারো বছর আগে গাজীপুর আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বোমা হামলা চালিয়ে আইনজীবীসহ আটজনকে হত্যার ঘটনায় ছয় জেএমবি (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) সদস্যের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। পাশাপাশি দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এ রায় দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও জঙ্গি দমন অভিযানের মধ্যে এ রায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে জঙ্গিদের মৃত্যুদণ্ড যে কার্যকর করা সম্ভব, তার প্রমাণ এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি। তবে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আইনজ্ঞরা।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা জেএমবি সদস্যরা হল; আরিফুর রহমান ওরফে আকাশ ওরফে হাসিব, এনায়েত উল্লাহ ওরফে ওয়ালিদ ওরফে জুয়েল, আবদুল্লাহ আল সোহাইন ওরফে যায়িদ ওরফে আকাশ, সাইদুর মুন্সী ওরফে শহীদুল মুন্সী ওরফে ইমন ওরফে পলাশ, তৈয়বুর রহমান ওরফে হাসান ও নিজাম উদ্দিন রেজা ওরফে রনি ওরফে কচি।
আসামি মসিদুল ইসলাম মাসুদ ওরফে ভুট্টো ও আদনান সামী ওরফে আম্মার ওরফে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছে।
এছাড়া মো. আশরাফুল ইসলাম ওরফে আরসাদ ওরফে আব্বাস খান ও মো. সফিউল্লাহ ওরফে তারেক ওরফে আবুল কালামকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
জেএমবি সদস্যদের মৃত্যুদণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করলেও রায়ে দু’জনকে সাজা কমানো ও দু’জনকে খালাস দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মনিরুজ্জামান কবির বেনারকে বলেন, “বিশেষ কোনো তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির কারণেই হয়ত উচ্চ আদালত দুজন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও দুজনকে খালাস দিয়েছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করবো।”
অসন্তোষ রয়েছে আসামিপক্ষেরও। তারাও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা এনায়েত উল্লাহর আইনজীবী সাইফুর রশীদ সবুজ বেনারকে বলেন, “আমরা সুবিচার পাইনি। এ রায় নির্দেশিত। আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি ও যুক্তিতর্কগুলো আমলে না নিয়ে বরং বর্তমান পরিস্থিতি ও সামাজিকতার প্রেক্ষাপটে আদালত রায় দিয়েছেন। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।”
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর গাজীপুর আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে দুটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে চার আইনজীবী গোলাম ফারুক, আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল আজিম, নুরুল হুদাসহ আটজন নিহত হন। ওই আত্মঘাতী হামলায় জেএমবি সদস্য আজাদ ওরফে জিয়াও নিহত হন।
শুরুতে এ ঘটনায় জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও আতাউর রহমান সানীকে আসামি করে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন। ২০০৭ সালের ৪ জুলাই পুলিশ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে এ ঘটনার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। তবে অন্য মামলায় জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, খালেদ সাইফুল্লাহ ও আতাউর রহমান সানির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এবং হামলাকারী আজাদ ও তার সহযোগী জেএমবি সদস্য মোল্লা ওমর ওরফে শাকিল মারা যাওয়ায় তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
পরে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২০ জুন ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মো. মোতাহার হোসেন। পরে নিম্ন আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জেল আপিল দায়ের করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা।
‘সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে এ রায় দৃষ্টান্ত’
সন্ত্রাসবাদ রুখতে এ রায়কে দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে ঘটনার এক দশক পরও আসামিদের শাস্তির মুখোমুখি করতে না পারার বিষয়টি ব্যর্থতা বলে মনে করছেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, “সন্ত্রাসবাদ রুখতে এমনই সাজা দিতে হবে। তবে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যায়।”