পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালের বোমা বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে ৬ জেএমবি জঙ্গি গ্রেপ্তার

ঝুমুর দেব, গৌহাটি,ভারত।
2016.09.26
160926-IN-BD-jmb-620.jpg ভারতে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন ছয় জেএমবি জঙ্গির দুইজনকে মুখ ঢেকে কলকাতার একটি আদালতে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬।
বেনার নিউজ

সোমবার কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক, বাকি তিনজন ভারতের। এসটিএফের দাবি, এইসব জঙ্গিরা ভারতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল।

এই ছয় জঙ্গির মধ্যে চারজনই আবার ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমগুলো সোমবার গুরুত্ব দিয়ে এই খবর প্রকাশ করেছে।

সোমবার কলকাতার লালবাজার পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এই ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গির গ্রেপ্তারের খবর জানান কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) ও এসটিএফ প্রধান বিশাল গার্গ। তিনি জানান, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গা থেকে এই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গার্গ বলেন, “বর্ধমান বিস্ফোরণের পর এইসব জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরা দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য ও উত্তরপূর্ব ভারতীয় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। আমরা আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি”।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির একটি নারী সদস্য সেলও তৎপর রয়েছে। ওই গ্রুপের সাংগঠনিক নাম ‘রেড রোজ’ বলে জানান তিনি।

উল্লেক্ষ, সোমবার কলকাতার একটি আদালত গ্রেপ্তারকৃত ছয় জঙ্গিকে আগামি ছয় অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে তিন বাংলাদেশি নাগরিক হল; জাহিদুল শেখ ওরফে জাফর ওরফে জাবিরুল, আনোয়ার হোসেন ওরফে ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালুভাই ও মোহাম্মদ রফিক ওরফে রুবেল ওরফে পিছি।

বাকি তিন ভারতীয় নাগরিক হল; মাওলানা ইউসুফ ওরফে বক্কর ওরফে আবু খেতাব, শাহিদুল ওরফে সূর্য ওরফে শামিম ও আবদুল কালাম ওরফে কলিম ভারতের নাগরিক।

পুলিশ জানায় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কাছ থেকে প্রচুর বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চারজন ২০১৪ সালে কলকাতার খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তাদের ধরিয়ে দিতে ইতিপূর্বে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম জেএমবির পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান। আর মাওলানা ইউসুফ ওরফে আবু খেতাব তার প্রধান সহযোগী এবং পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের সমন্বয়নের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। তাদের ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা- এনআইএ।

এছাড়া জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ রুবেল, শাহিদুল ইসলাম ও আবদুল কালাম খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। কালামকে ধরিয়ে দিতে তিন লাখ এবং রুবেলকে ধরিয়ে দিতে এক লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে শাকিল গাজি ও করিম শেখ নামে জেএমবির দুই জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনার তদন্ত শেষে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বলেছিল, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির জঙ্গিদের আস্তানা ছিল খাগড়াগড়ের ওই বাড়িটিতে।

জাতীয় তদন্ত সংস্থা এই ঘটনায় করা মামলায় তিন দফায় দেওয়া অভিযোগপত্রে মোট ৩০ জনকে আসামি করে। তাদের মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশি রয়েছে। গত ১৯ আগস্ট কলকাতার নগর দায়রা আদালতে মামলাটির বিচার শুরু হয়।

“দুদিন আগে আসামের কাছাড় থেকে একটা জাল নোটের মামলায় জাহিদুল শেখকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদুল জানায় যে সে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত। তার কাছ থেকে বেশ কয়েকজন জেএমবি জঙ্গির খবর জানতে পারে এসটিএফ,” সংবাদ সম্মেলনে জানান এসটিএফ প্রধান।

টাস্কফোর্স প্রধান বলেন, “সেই সূত্র ধরে রোববার নিউ কোচবিহার স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আবুল কালামকে। তারপর বনগাঁ থেকে আনোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি দুজন মাওলানা ইউসুফ ও শাহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট থেকে”।

সাংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছয়জনকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের রিমান্ডে বা পুলিশ হেফাজতে রাখার আদেশ দিয়েছে আদালত।

এসটিএফের দাবি, শাহিদুল জেএমবির উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি আসামের বরপেটায়। আর গ্রেপ্তার হওয়া ইউসুফ হলেন শাহিদুলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’। এই জঙ্গিরা উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল।

“এই ছয়জনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ভারতে জেএমবির কর্মকান্ডের ব্যাপকতা আরও বেশি পরিষ্কার হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে আরও সতর্ক হতে হবে,” বেনারকে জানান কলকাতা পুলিশের সাবেক প্রধান প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায়।

তিনি আরও বলেন, “এখন শোনা যাচ্ছে, ভারতে জেএমবির নারী শাখা রয়েছে যা আরও বেশি সতর্কতার ইঙ্গিত দেয়”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।