যুক্তরাষ্ট্রে সমকামীদের উপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শোক
2016.06.13
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে সমকামিদের একটি নৈশক্লাবে বন্দুকধারী এক ব্যাক্তি ইসলামী জঙ্গি সংগঠন আইএস’এর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ৪৯ জনকে হত্যা করে।এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোক ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।বাংলাদেশও সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদে যোগদান করে।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাজনৈতিক নেতারা বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক মুসলিম বসবাসকারি দেশ—ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এমনকি মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডও মার্কিন জনগণের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার তাঁর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পাঠানো এক শোক বার্তায় জানান,“আমি সম্ভাব্য কঠোর ভাষায় এই হীন সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাই এবং যে কোন ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করছি”।
শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,“আসুন আমাদের শান্তিপ্রিয় সমাজ থেকে এই ঘৃণ্য অপরাধ নির্মূল করার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করি”।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বার্তায় বলেন, “এই কঠিন সময়ে আমার সরকার ও জনগন আপনার সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে চায়। মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হিসেবে উদ্ভূত এই সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় এক সঙ্গে কাজ করার আমাদের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাও পুনর্ব্যক্ত করছি।” তিনি আরো যুক্ত করেন, সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারানো প্রতিটি মানুষের জন্যই বেদনা ও দুঃখে আমাদের হৃদয়ে রক্ত ঝরে।
উল্লেখ্য তাঁর সরকার গত শুক্রবার থেকে দেশব্যাপী সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।এইসব কথিত ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ লেখক,ব্লগার,প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ,পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, সমকামিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্ব ও তাঁর বন্ধু, মাজারের পীর, সেবাশ্রমের সেবক সহ ৪৬টি হামলার ঘটনায় ৪৮ জন খুন হয়েছেন।
চলতি বছর ২৫ এপ্রিল নিজ বাসায় সমকামিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্ব জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু খুন হওয়ার ঘটনায় শোক না জানালেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাইটক্লাবে সমকামীদের উপর হামলা ও হতাহতের ঘটনায় শোক জানালেন।
ওই ঘটনার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে মার্কিন পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়, ওমর মতিন নামে ২৯ বছর বয়সী আফগান বংশোদ্ভূত এক যুবক রবিবার রাতে পালস নামের সমকামীদের নৈশক্লাবে ঢুকে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে আফগান বংশোদ্ভূত এই মুসলিম আমেরিকানের এ্যাসল্ট রাইফেলের গুলিতে ৪৯ জন নিহত হন, আহত হন আরও ৫৩ জন।
উল্লেখ্য ঘটনার আগে ওই যুবক নিজেই ৯১১-এ(যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের ইমারজেন্সি নাম্বার) কল করে পুলিশকে জানায়, সে চরমপন্থি জঙ্গি সংগঠন আইএস’এর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ঘটাতে যাচ্ছে।
সিবিএস নিউজের রিপোর্টে বলা হয়, ঘটনার পর আইএস’তার নিজস্ব গণমাধ্যম ‘আমাক’এর মাধ্যমে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে, কিন্তু এটা এখনও অস্পষ্ট রয়ে গেছে মতিন সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক চরমপন্থী গ্রুপ আইএস-এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল কিনা।
এদিকে সোমবার সকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি হাসপাতালে নার্স পদে কর্মরত ইন্দোনেশিয়ার একজন সমকামি আদামো কোনার্স বেনারকে জানান,"এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। সর্ববৃহত মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার একজন সমকামি হিসেবে এটা আমার অনুভূতি”। ৩২ বছর বয়সী আদামো বলেন, সমকামিদের একত্রিত হওয়া এবং সামাজিকতার জন্য এই ক্লাব আদর্শ ও নিরাপদ স্থান ছিল। এ ঘটনার পর তাঁরা আর কোথাও নিরাপদ বোধ করবেন না।
“সমকামিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি।এই হামলার ঘটনা সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে,” জানান আদামো।
এদিকে আইএসের দায় স্বীকারের বার্তা এলেও সমকামী নৈশক্লাবে হামলাকারী ওমর মতিনের সঙ্গে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সরাসরি যোগাযোগ থাকার বিষয়টি নাকচ করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হামলাকারী মতিনকে দেখছেন স্বদেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গিবাদী হিসেবে। “বলা যায়, এটা আমাদের হোমগ্রোন উগ্রবাদীদের একটা উদাহরণ, যা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ বহু দিনের,” বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
সোমবার ওবামা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মতিনের আইএস সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ‘অস্পষ্ট’ বলে উল্লেখ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স ও বিবিসি।
“শেষ মুহূর্তে সে আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তাদের নির্দেশে সে এই হামলা চালিয়েছে,” বলেন ওবামা।
এই হামলার পর ‘নমনীয়’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওবামা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী হামলা’ ধরেই এর তদন্ত চালানো হচ্ছে।
দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও বলছেন, মতিন আইএস নির্দেশিত হয়ে এই হামলা চালিয়েছেন বলে তারা প্রমাণ পাননি।
তবে মতিন হামলার আগে পুলিশে ফোনে করে তার আইএসের প্রতি আনুগত্যের কথা জানিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে আইএস সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না মিললেও মতিন ইন্টারনেটে জঙ্গি ভাবাদর্শে দীক্ষিত হন বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমে-কে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে।