পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গির একজন গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.06.16
160616-BD-suspect-620.jpg ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসিয়াল সাইটে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে প্রকাশিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ছয় শীর্ষ জঙ্গির একজন সুমন পাটোয়ারী ওরফে সিহাব ওরফে সাইফুল’কে (২০) গতকাল বুধবার ডিএমপি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।সুমন গতবছর লালমাটিয়ার ‘শুদ্ধস্বর’প্রকাশনা অফিসে হামলাকারীদের একজন। ১৬ জুন, ২০১৬।
এএফপি

পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গির একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তার নাম সুমন হোসেন পাটোয়ারি (২০) ওরফে সাকিব ওরফে সিহাব ওরফে সাইফুল।

এ বছর মে মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসিয়াল সাইটে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ওই ছয় জঙ্গির একজন সুমন। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে নিজ হাতে কুপিয়েছিল জঙ্গি সুমন।

একের পর এক বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই আসামিকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় জঙ্গি সম্পৃক্ত ঘটনাগুলোর তদন্তে একধাপ অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত বছর ৩১ অক্টোবর লালমাটিয়ায় ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে আহমেদুর রশীদসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। একই দিনে শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে আরেক প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে এই দুটি পৃথক ঘটনা দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। প্রায় আট মাস ধরে ওই দুটি ঘটনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে নিহত ও আহতদের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে।

“আসলে আমাদের কাছে বলার মতো কোনও তথ্য নেই। পুলিশ বলে আসছে তদন্তে অগ্রগতি আছে। আমরাও তাই শুনছি। পত্রপত্রিকা পড়ে বিভিন্ন তথ্য জানছি। কিন্তু খুব একটা অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না,” বেনারকে জানান নিহত ফয়সল আরেফিনের বাবা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।

আহত টুটুলের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বেনারকে বলেন, “টুটুল এখন দেশের বাইরে আছেন। তবে কোন দেশে আছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে সে সম্পর্কে তথ্য জানাতে চাই না।”

এদিকে বৃহস্পতিবার শুদ্ধস্বরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব লীলেন টেলিফনে বেনারকে জানান, “টুটুল, বাসু  এবং রহিম এঁদের কেউই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারেননি,তবে তাঁদের আশা পুলিশ সঠিক ব্যক্তিকেই ধরেছে”। তিনি আরো বলেন, “আমরা ঘটনার পিছনের সত্যটা জানতে চাই”।

গত ১৯ মে লেখক অভিজিৎ রায়, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনসহ অন্তত ১০টি হত্যায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে ধরিয়ে দিতে তাদের নাম ও ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে ডিএমপি। এই ছয়জনের একজন সুমন।

বাকি পাঁচজন হচ্ছে; শরিফুল, সেলিম, সিফাত, রাজু ও সাজ্জাদ। এদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত  পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। এসময় জানানো হয়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে আনসারুল্লাহর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

একই রাতে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে ও পরে দক্ষিণখানের সরদার পাড়ার আনসারুল্লাহর দুটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমাসহ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরে আনসারুল্লাহর আরও সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য এবং অন্য তথ্যদাতাদের তথ্যের ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“গত বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে ফুট ওভারব্রিজের পাশে বাসস্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে নিষিদ্ধঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য,” সংবাদ সম্মেলনে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুমনের বাড়ি চাঁদপুরে হলেও বড় হয়েছেন চট্টগ্রামের হালিশহরে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আন্দরকিল্লায় একটি মেডিকেল সরঞ্জামের দোকানে বিক্রয়কর্মীর চাকরি নেন। গত বছরের প্রথম দিকে তিনি আনসারুল্লাহ টিমে যোগ দেন। যার মাধ্যমে সুমন আনসারুল্লাহ টিমে যোগ দিয়েছিলেন তাকেও কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলার সার্বিক সমন্বয়কারী ও প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন শরীফ এবং শাহবাগে প্রকাশক ফয়সল হত্যার দায়িত্বে ছিলেন সেলিম। পুরস্কার ঘোষিত ছয় সন্দেহভাজনের মধ্যে সেলিম ও শরীফও আছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।