বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা ফেরতের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2016.04.26
160425-BD-border-1000.jpg সাগরে খুঁজে পাওয়া মিয়ানমারের অভিবাসীদের মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা মংডু দিয়ে প্রত্যাবাসান করানো হচ্ছে। রাখাইন রাজ্য, জুন ৮ ২০১৫।
এএফপি

বাংলাদেশ থেকে কয়েকশ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর যে দাবি বাংলাদেশ সরকার করছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার।দুই পক্ষই নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে অনড় রয়েছে।

এই মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩৪০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দাবি ‘সত্য নয়’ বলে মিয়ানমার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের মুখপাত্র যতায় দাবি করেন। গত রোববার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

ওই মুখপাত্র বলেন, “এই প্রতিবেদনটি চোখে পড়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। এরপর আমরা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরাও বলেছেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সে কারণেই আমরা বলছি প্রতিবেদনটি সত্য নয়।”

মুখপাত্র আরও বলেন, “বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা যদি কোনো ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে চাই তাহলে সে সিদ্ধান্ত আসতে হবে ইউনিয়ন সরকার থেকে।”

“প্রথমেই দেখতে হবে যাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে তাঁরা মিয়ানমারের কি না। আমরা যাচাই-বাছাই না করে এ ব্যাপারে কিছু করতে পারি না। তার ওপর আবার অভিবাসনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, জানান ওই মুখপাত্র।

প্রতিবেদনটি ‘ভারসাম্যহীন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারপরও আমরা এটাকে হালকা ভাবে দেখছি না এবং আমরা অবশ্যই সংবাদ মাধ্যমকে এ বিষয়ে অবহিত করব।”

বিজিবি: সোমবার আরও ৩০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়

বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার ৩৪০ শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর যে দাবি করেছেন, সে অবস্থান থেকে সরে আসেননি।

বিজিবির কক্সবাজার অফিস থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে “এপ্রিল মাসে মিয়ানমারের ৪৩২ মুসলিম নাগরিককে বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে গত সোমবার ৩০ জনকে চট্টগ্রামের পূর্বদিকে তমব্রু ও বেতবুনিয়া এলাকায় অভিযানের সময় পাওয়া যায় ও পরে ফেরত পাঠানো হয়।”

ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭৫ কিলোমিটার (১৭০ দশমিক ৮ মাইল) সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৫ কিলোমিটার (১০৮ দশমিক ৭ মাইল) এলাকা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া আছে। বাকি ১০০ কিলোমিটার (৬২ দশমিক এক মাইল) জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই, কিংবা পাহাড়ি-দুর্গম এলাকা।

সরকার আরও বলেন, “রোহিঙ্গারা সীমান্তের যে অংশে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই, সে অংশ দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে। মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে না। সে কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও চলছে।”

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে কমান্ডারের নেতৃত্বে ওই জায়গাগুলোয় বিজিবি ব্যাটালিয়ন তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে।

বেনার নিউজ কে সরকার বলেন, “অবৈধভাবে আসা মিয়ানমারের নাগরিকেরা বাংলাদেশে ঢুকলেই আমরা তাঁর যাবতীয় ব্যক্তিগত খবর তথ্যভান্ডারে লিপিবদ্ধ করছি এবং ছবি তুলে রাখছি। তারপর আমরা সীমান্তের ৫০ মিটারের কাছে এদের পৌঁছে দিচ্ছি। এরা যতক্ষণ না মিয়ানমারে ফেরত যাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে থাকি।”

কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের কমান্ডার আরও বলেন, মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ নির্দিষ্ট তল্লাশি চৌকিতে থাকেন। হয় তাঁরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা দেখতে পান না, নয় তো দেখার চেষ্টা করেন না। তিনি জানান, মিয়ানমারের কত লোক বাংলাদেশে ঢুকল বা কত লোক বেরিয়ে গেল সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য মিয়ানমারের কর্মকর্তারা নথিভুক্ত করেন না।

সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজারের প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন। মূলত সে সময়েই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ব্যাপক আকারে শুরু হয়। তিনি বলেন, দেশটিতে সেনাশাসন শুরুর পর থেকেই রোহিঙ্গাদের ঠেলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া শুরু হয়। প্রতিবারই বলা হয় এরা অবৈধ বাংলাদেশি।

রহমান বলেন, “এটা খুবই স্বাভাবিক যে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে আবারও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের বিষয়টি অস্বীকার করবে। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুটি বার্মিজ রাজনীতিতে খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। মিয়ানমারের কোনো সরকারই রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনো কথা বলবে না। কারণ বৌদ্ধ ধর্মপ্রধান দেশটিতে মুসলিম-বিরোধী ভাবধারা খুবই সক্রিয়।”

তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো চায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত অং সাং সুকি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করবেন।

রহমান আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো না কোনোভাবে সুকি সমস্যার সমাধান করবেন, কিন্তু তিনি সময় নেবেন। এই মুহূর্তে মিয়ানমার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পক্ষে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ফেরত পাঠিয়েছে বা রোহিঙ্গারা আবারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে এই দাবি অস্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ ইস্যুটি রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতা।”

তিনি বলেন, “সুকি সরকারের ওপর মিয়ানমারের মানুষের অনেক প্রত্যাশা। এই সরকার হয় তো এমন কিছু করবে না যা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বিপক্ষে যায়।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।