জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় নিশা দেশাই

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.07.11
Nisha-with-PM1000.jpg প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল। জুলাই ১১, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় হাজির হয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল।

শুধু তাই-নয়, গুলশানের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) সহযোগিতা করছে বলেও জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা সহযোগিতার ধরন সবার সামনে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে পরপর দুটি জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। এই মাত্রা ট্রাভেল অ্যালার্ট থেকে এখন ট্রাভেল ওয়ার্নিংয়ে উন্নীত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব

গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে পূর্ব নির্ধারিত সফরসূচি এগিয়ে নিয়ে হঠাৎ তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছেন নিশা দেশাই।

সফরকালে নিশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছেন। সেসব বৈঠকে বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে সক্ষমতা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন এই মার্কিন কূটনীতিক।

সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন নিশা দেশাই। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, মার্কিন এই কূটনীতিক সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে কারিগরি ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহযোগিতা দিতে তাঁর দেশের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

নিশা দেশাই বলেন, “এ ধরনের সন্ত্রাস একটা চ্যালেঞ্জ। এর বিরুদ্ধে আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে চাই।”

এ সময় শেখ হাসিনা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে সন্ত্রাস দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। এ ছাড়া সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ওপরও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিশা দেশাইয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যে ধরনের সহযোগিতা চাইব সব ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব কী ধরনের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।”

তদন্তে যুক্ত এফবিআই

গুলশানের হলি আর্টিজেন রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) সহযোগিতা করছে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত এফবিআই সদস্যরা এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সরাসরি কেউ কিছু না বললেও গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে গুলশান হামলার তদন্তে এফবিআইয়ের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।

সে বিষয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রোববার নিশার সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বেনারকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। সেসব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া কারিগরি সহযোগিতার আওতায় কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, বিভিন্ন পন্থা বের করা যায় সেসব নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।”

এর আগেও ব্লগার অভিজিৎ হত্যা তদন্তে সহযোগিতা করে এফবিআই। যদিও আজ অবধি সে তদন্তের কোন সুরাহা হয়নি।

সহযোগিতার ধরন প্রকাশ করতে হবে

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ভারত—যে কারও কাছ থেকে নেওয়া সহায়তার ধরন প্রকাশ করতে হবে।

এ বিষয়ে সাবেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “সন্ত্রাস দমনে বিশ্বব্যাপী তথ্য আদান প্রদান হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া বা নেওয়া ইতিবাচক। এর আগে এ ধরনের সহায়তা নেওয়া হলেও তা প্রকাশ করেনি সরকার।”

তিনি বলেন, এবার কী ধরনের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে, তা প্রকাশ করতে হবে। কারণ, এর সঙ্গে ইতালি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ জড়িত।

ব্যস্ত কর্মসূচি

রোববার সকালে ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই ব্যস্ত দুটি দিন পার করেছেন মার্কিন কূটনীতিক নিশা দেশাই। সরকারের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে কূটনীতিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

তিন দিনের ঢাকা সফরের প্রথম দিনে তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। এদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও বৈঠক করেন নিশা।

সোমবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারদের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক দিয়ে দিন শুরু করেন তিনি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গুলশানের বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ঢাকা সফরে সেখানেই অবস্থান করছেন নিশা। এরপর তিনি হলি আর্টিজেন ক্যাফে পরিদর্শন করে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পরে দুপুর থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

প্রায় প্রতিটি বৈঠকে নিশার সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানপ্রিত আনন্দ। মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়ার আগে নিশা কয়েকজন সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন।

বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জোরদার

সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি এবং উগ্রপন্থী সহিংসতার বিষয়ে সতর্ক করে এই সময় ঢাকা সফর ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানানো হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।