জুলহাসের পরিবারকে ওবামার সমবেদনা
2016.06.03
সমকামীদের অধিকার আদায়ের কর্মী জুলহাজ মান্নান হত্যা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে পুলিশের চেষ্টা যেমন আছে, তেমনি আছে সমালোচনাও।
এরই মধ্যে শোক প্রকাশ করে নিহতের পরিবারকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চিঠি ঢাকায় পৌঁছেছে। গত বৃহস্পতিবার জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নানের হাতে ওই চিঠি পৌঁছে দেন বাংলাদেশে মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির প্রধান ইয়ানিনা জারজালস্কি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৫ মে ওই চিঠিতে সই করেন। এতে ওবামা লিখেছেন, “জুলহাজের মৃত্যুতে মিশেল ও আমি আপনাদের দুঃখ ও বিষাদের অংশীদার। আমরা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শোক প্রকাশ করছি। জুলহাজকে হারিয়ে আপনাদের যে বেদনা, তা বর্ণনাতীত।”
“ইউএসএআইডি কার্যালয়ে চিঠিটি আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়,” জানান মিনহাজ মান্নান। তবে এক মাস পার হলেও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
ওবামার চিঠিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশে একটি অধিকতর ন্যায়সংগত ও সমতাভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন জুলহাজ। আর সে কাজেই তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।”
“যাঁরা তাঁকে চিনতেন ও ভালোবাসতেন এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তাঁর কাজ যাঁদের উজ্জীবিত করেছে, তাঁদের মাঝে জুলহাজের কীর্তি রয়ে যাবে। জুলহাজের সাহস, অন্যের জন্য তাঁর সহানুভূতি চিরজাগরূক হয়ে থাকবে—এটুকু জেনে অন্তত আপনারা সান্ত্বনা খুঁজে নেবেন। এই চরম দুঃসময়ে আমি আপনাদের পাশে আছি,” লিখেছেন ওবামা।
গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগানের বাসভবনে খুন হন ৩৫ বছর বয়সী জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব তনয়। জুলহাজ ইউএসএআইডিতে চাকরি করতেন। তিনি সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী রূপবান সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর ২৬ বছর বয়সী মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী।
ওই জোড়া খুনের দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলামের নামে বার্তা এলেও পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ ওই সংগঠনের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে জুলহাজ হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার অনুরোধ জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে একদিকে জুলহাজ ও তনয় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার ওপর যেমন গুরুত্ব আরোপ করেন, তেমনি জঙ্গিবাদের হুমকি মোকাবিলায় সব ধরনের সহযোগিতার প্রস্তাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে নিশা দেশাই বৈঠক করেন।
এদিকে ওই হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, বিষয়টিকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন।
দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই
জুলহাজ ও তাঁর বন্ধু মাহবুব হত্যাকাণ্ডের তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই । হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছে এমন কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গত ১৫ মে পুলিশ কুষ্টিয়া থেকে শরিফুল ইসলাম শিহাব নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে এই মামলার সূত্রে। সংবাদ সম্মেলনে শরিফুলের গ্রেপ্তারকে পুলিশ তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি বলেও দাবি করে। পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের কোনো না কোনো পর্বে শরিফুল অংশ নিয়েছে।
“শরিফুলের কাছ থেকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সে অনুযায়ী তদন্ত এগোচ্ছে। তবে জনসমক্ষে জানানোর মতো অবস্থায় এখনো আসিনি,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন।
ডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সাম্প্রতিক খুনের ঘটনাগুলোয় সম্পৃক্ততার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তা হলো আটক লোকজন একটা পর্যায়ের পর আর তথ্য দিতে পারছে না।
ওই কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভিন্ন শাখা আছে। এক শাখার সদস্য অন্য শাখার সদস্য সম্পর্কে কিছু বলতে পারে না।