মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই—প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.23
20160923-BD-PM1000.jpg যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। সেপ্টেম্বর ২১,২০১৬।
ইয়াসিন কবির জয়।

দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই— যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মন্তব্যের পর রাজনীতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে ঢিমেতালে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল তা নাকচ হয়ে গেল।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি প্রত্যাখান করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি নিউইয়র্কে যান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলে আসছিল, আরেকটি নির্বাচন দেওয়া হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করার যুক্তি দেওয়া হয় দলটির পক্ষ থেকে।

তখন সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশীদের জানানো হয়, খুব শিগগির আরেকটি নির্বাচন দেওয়া হবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়ার শর্ত জুড়ে দেন সরকারের মন্ত্রীরা।

কিন্তু নির্বাচনের পর রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সরকার নতুন নির্বাচনের কথা ভুলে যায়। গত কয়েকমাস ধরে বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। গণমাধ্যমেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জানিয়ে দিলেন, মধ্যবর্তী নিবার্চনের কোনো সম্ভাবনা নেই। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “কেউ ভুল করে থাকলে ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে।”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে–বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মিলিয়ে ১২টি দল নির্বাচন করেছে। তাতে ১৫৩টি আসনে প্রত্যক্ষ কোনো নির্বাচন হয়নি। এসব আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। পরে উপনির্বাচনে আরও একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।

“এ ধরনের নির্বাচন ইতিহাসে নজিরবিহীন। দেশের মানুষ এ নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে বলে আমি মনে করি না,” বেনারকে জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক এই সংকট কবে, কীভাবে শেষ হবে তা বলা কঠিন।

‘‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনমনীয় ভূমিকা দেশকে ভবিষ্যতে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে। তাঁরা যদি ঠান্ডা মাথায় বসে আলাপ-আলোচনা করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে একমত হন, তাহলে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তাই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে তাদেরকেই,” বেনারকে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম।

সংলাপ হবে না

দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সংজ্ঞা জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে এমন কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে, সংলাপে বসার প্রয়োজন?

“যারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, তারা রাজনৈতিক ভুল করেছিল। ভুলের মাশুল তাদেরকেই দিতে হবে। এখন আলাপ করে তাদেরকে কি ক্ষমতায় আনতে হবে?” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা অবস্থায় ঢাকার রাজনীতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে। শূক্রবার নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল মেয়াদ শেষের আগে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সম্ভাবনা আবার নাকচ করেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা জানায়, কুড়িগ্রামে শাজাহান খান এবং নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে কথা বলেন।

ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি আগাম নির্বাচন দাবি করলেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। আগামী নির্বাচনে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি নির্বাচনে যেতে বাধ্য হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

আগাম নির্বাচনের কথা নাকচ করে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা মাঠে বক্তব্য দিলেও ভেতরে ভেতরে সরকার একটি আগাম নির্বাচনের অঙ্ক কষছে বলে জানা গেছে।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী বছরের শেষের দিকে অথবা ২০১৮ সালের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে এ রাজনৈতিক অঙ্ক কষা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দলকে দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলানোর চিন্তা রয়েছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তারাও আগামী দেড় বছরের মধ্যে একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন। তার আগে বিএনপিতে ভাঙন ধরানোসহ বড় ধরনের ঝড়ের আশঙ্কাও করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস, দল ভাঙার তৎপরতা নতুন করে জোরদার এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিভিন্ন মামলার দ্রুতগতি সে ঝড়েরই আলামত হিসেবে দেখছেন দলটির নেতারা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা আশা করছেন, চলতি বছরের মধ্যে অন্তত দুটি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হয়ে যাবে। তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়ে পড়লে বিএনপি নতুন করে চাপে পড়বে। তখন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না হলে দলটির একটি অংশকে নির্বাচনে আনা সহজ হবে।

“সময় নষ্ট না করে আসুন নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসি। দেশবাসী ও বিশ্ববাসী এই নির্বাচন গ্রহণ ও সমর্থন করেনি। এভাবে জোর করে ক্ষমতায় থাকার পরিণতি কোথাও ভালো হয়নি,” বেনারকে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।