স্ত্রী হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই লড়বেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.06.06
PoliceOfficer-Wife-Killing620.jpg পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত এই মোটর সাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। জুন ৫, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

স্ত্রী হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে নিজেই লড়বেন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা মামলায় ওই পুলিশ সুপার (এসপি) নিজেই বাদী হয়েছেন।

সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

গত রোববার সকালে সাত বছরের ছেলেকে স্কুলবাসে উঠিয়ে দিতে বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই ও আর নিজাম রোডে কোপানোর পর গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে (৪০)। তাঁর মরদেহ গত সোমবার ঢাকায় দাফন করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত বাবুল আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ছিলেন। চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে বেশ কিছু অভিযানে নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর স্ত্রী খুনের পেছনে জঙ্গিরাই সম্পৃক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশ–বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিরা ধরা পড়ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। কারা এ হত্যাকাণ্ডর সঙ্গে জড়িত, নেপথ্যে কোন শক্তি এবং এসব ঘটনায় কারা লাভবান হচ্ছে—সেসব নিয়েও নানা জল্পনা–কল্পনা চলছে।

গত বছর এ ধরনের ২৯টি হামলায় ৩০জন এবং চলতি বছরের ৫ জুন পর্যন্ত ১৬টি হামলায় ১৭জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির মিল রয়েছে। গতকাল এই প্রথম একজন নারী এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন।

“সরকার ও পুলিশ চেষ্টা করছে এটা বন্ধের। বেশকিছু আসামি ধরাও পড়ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঘটনাগুলো থামছে না। তবে দুর্বৃত্তরা আর বেশি দূর যেতে পারবে না,” বেনারকে বলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি এসব ঘটনা প্রতিরোধে মানুষকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে মাহমুদা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সোমবার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এদের নাম–পরিচয় জানায়নি পুলিশ।

মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগের মালিকের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

“প্রকৃত মালিকের সন্ধান পেলেও তিনি তা অন্যপক্ষের কাছে বিক্রি করেন। তাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে,” সাংবাদিকদের জানান পুলিশ কমিশনার।

রোববার রাতে পাঁচলাইশ থানার বাদুরতলা বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে এই মোটর সাইকেলটি উদ্ধারের পর পুলিশ দাবি করে, এটি খুনিরা ব্যবহার করেছিল।

পুলিশের মনোবল প্রসঙ্গ

পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে দিতেই জঙ্গিরা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতকাল বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করবে।

মূলত গোয়েন্দা পুলিশ অন্য সব বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, এই হামলার ফলে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার হবে। তবে মাঠপর্যায়ে পুলিশকে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।

মোটরসাইকেলে তিনজন নিষিদ্ধ

এখন থেকে মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহি থাকতে পারবে না। সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকাণ্ডগুলোতে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলে আসা তিন আরোহি প্রায় প্রতিটি হত্যায় জড়িত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, এখন থেকে মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি বসা যাবে না। তিনজন মোটরসাইকেলে চড়লে বাধা দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

মাহমুদা নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তাঁর হত্যাকারীরাও মোটরসাইকেলে চড়ে এসেছিল।

তবে মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হচ্ছে সামাজিক গণমাধ্যমে।

“সাম্প্রতিক টার্গেট কিলিং ঠেকাতে এ ধরণের সিদ্ধান্ত কোনও কাজে আসবে বলে মনে হয় না,” বেনারকে জানান ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী নাসির মাহমুদ।

নিন্দা প্রতিবাদের ঝড়

বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। সোমবার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পৃথক বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু এ ধরণের একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে চরম নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি করছে।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিবৃতিতে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।