জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান,‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৩

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.06.09
BDPolice-Special-Drive620.jpg আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের সামনে থেকে তোলা। জুন ৭, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। শুক্রবার থেকে সপ্তাহজুড়ে এই সাঁড়াশি অভিযান চলবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

সম্প্রতি এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীসহ ও সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে দীর্ঘ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার পর গত চারদিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৮ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে দাবি করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সাম্প্রতিক কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই চারজন যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

সর্বশেষ বুধবার গভীর রাতে তিনজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এদের দুজনকে সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী ও অন্যজনকে সন্দেহভাজন জেএমবির সদস্য বলে দাবি পুলিশ ও র‌্যাবের।

তবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার না করে আকস্মিক এই বিতর্কিত মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে

বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের বৈঠকে বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের ঘটনাকে নির্মম, বর্বরোচিত ও দুঃখজনক উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন। দৃঢ় মনোবল নিয়ে পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, সারা দেশের জঙ্গিদের তালিকা হালনাগাদ, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়ানো, ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশি ব্যবস্থাকে কার্যকর করা, আগন্তুক ও ভাড়াটিয়াদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সভায়  সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রাজধানীতে নিহত দুজন

র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাজধানী ঢাকার রামপুরা ও তুরাগ এলাকায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের একজন কামাল পারভেজকে (৪৫), যাকে ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে অস্ত্রসহ আটকের পর রাতে র‌্যাব সদস্যরা সঙ্গে নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিল।

নিহত অন্যজনের নাম নজরুল (৪০)। তিনি ছিনতাইকারী ও নারী পাচারকারী ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তুরাগ এলাকায় নিহত হন নজরুল। বুধবার বিকেলে একটি পিস্তল, একটি রিভলবার ও নয়টি গুলিসহ তালতলা এলাকা থেকে এক নারীর গয়না ও টাকা ছিনতাই করার সময় তাকে আটক করা হয় বলে জানায় র‌্যাব।

র‌্যাব-৩ এর অপারেশন অফিসার আব্দুল করিম জানান, রাতে কামালকে সঙ্গে নিয়ে বালুর মাঠ এলাকায় অভিযানে গেলে, তার সহযোগীরা র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও পাল্টা জবাবে গুলি চালায়। এ সময় নিজের সহযোগীদের ছোড়া গুলিতেই কামাল আহত হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বুধবার রাত ২টার দিকে তুরাগ এলাকার একটি চেকপোস্টে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে র‌্যাবের গোলাগুলিতে নজরুল আহত হয়। তাকেও হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান র‌্যাব-১ অধিনায়ক তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। র‌্যাব-১ জানায়, ‘অজ্ঞান পার্টির’ নেতা ছিলেন নজরুল। রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় জুড়ে মানুষকে অজ্ঞান করিয়ে অর্থ-সামগ্রী লুট করাই ছিল তার কাজ। এ ছাড়া ছিনতাই ও নারী পাচারের সঙ্গেও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গাইবান্ধায় জেএমবি সদস্য নিহত

বুধবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন এক জেএমবির সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে গোবিন্দগঞ্জ পুলিশ।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি সদস্যরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে এমন খবরে প্রেক্ষিতে, পুলিশ অভিযান চালায়। তখন জেএমবি সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলিতে ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থলে ওই ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়।

এদিকে থানার এস আই গফুর বেনারকে বলেন, “বৈঠক এলাকায় পুলিশের আকস্মিক উপস্থিতি টের পেয়ে জেএমবি সদস্যরা গুলি করলে আমরাও আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হই। এসময় ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়।”

সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত

শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে আটকের পরেই একের পর এক ‘আটকৃত’ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় নিহত হচ্ছেন। এসব ঘটনা জন সাধারণের মনে ভীতির সঞ্চার করছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা বা সন্ত্রাসী দমন করার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। সেটা আইনের কাঠামোগত পদ্ধতিতে করতে না পেরে বিচারবহির্ভূত পথ বেছে নিয়েছে তারা। এটা ঠিক নয়।”

তাঁর মতে, এ ধরনের ঘটনা দেশের মানুষের মাঝে এক ধরনের ভীতি তৈরি করছে। কারণ, নিরপরাধ হয়েও কেউ শুধুমাত্র সন্দেহের বশে এমন ভয়াবহতার শিকার হয়ে যেতে পারে। আবার শত্রুতা করেও কেউ অন্যের নাম জড়িয়ে দিতে পারে।

এলিনা খান আরও বলেন, বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে পুলিশের বর্ণনা হাস্যকর বর্ণনাতে পরিণত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।