রোজায় পণ্যের দাম চড়া,ব্যবসায়ীদের সতর্ক করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী
2016.06.09
রোজা শুরুর দিন গত মঙ্গলবার থেকে বেগুন, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ও ছোলাসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। মাছ, মাংসসহ যেসব পণ্য রোজাদারদের বেশি প্রয়োজন হয়, সেগুলোর দাম বেশি বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা ক্ষুব্ধ।
এই পরিপ্রেক্ষিতে রমজানে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের চেষ্টা করলে ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রামের মীর গ্রুপের মতো অবস্থা হবে। উল্লেখ্য, মিল থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে কেনা চিনি পাইকারি বাজারে ৫৮ টাকায় বিক্রি করায় চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জের হাজী মীর আহমদ ট্রেডার্সকে গত বুধবার ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে ভেজাল পণ্য কেনাবেচা বন্ধের চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পর্যালোচনা সভায় বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে দাম বেঁধে দেওয়ার চেয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা রোজা থাকি, নামাজ পড়ি, ইফতার করি, সেহরি খাই। সংযমের মাসে আমরা সবাই যেন সংযমী হই। ব্যবসায়ীদের সংযমের মধ্য দিয়েই ব্যবসা করা উচিত।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সরকার যেমন চায় না, তেমনি ভোক্তাদের ক্ষতিও সরকার চায় না। তিনি আরও বলেন, চিনি ৪৮ টাকায় পাইকারি বাজারে পৌঁছায়। কেউ যদি এটার দাম অস্বাভাবিক বাড়াতে চেষ্টা করে, তাহলে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা
চট্টগ্রামের এস আলম সুগার মিল থেকে প্রতিদিন কেনা দুই হাজার মেট্রিক টন চিনি প্রতি কেজি ১২ টাকা লাভে বিক্রি করছিল খাতুনগঞ্জের হাজী মীর আহমদ ট্রেডার্স। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা বাড়তি মুনাফা করছিল।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অসহযোগিতামূলক আচরণের পাশাপাশি দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার কথা জানান র্যাব-৭ এর কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বেনারকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের সুগার মিলে প্রতিদিন দুই হাজার মেট্রিক টন চিনির অর্ডার হয়েছে। এস আলম সুগার মিলে উৎপাদিত চিনি পাইকারিতে পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করেন ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুস সালাম। উৎপাদিত চিনির ৮০ ভাগ কেনেন তিনি। বাকিটাও তার লোকজন দিয়ে কিনিয়ে নেওয়া হয়।”
অভিযানে হাজী মীর আহমদ ট্রেডার্সের কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয় জানিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর বলেন, প্রতি কেজিতে এক বা দুই টাকা লাভ করবেন বলে মুচলেকাও দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান মালিক।
মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালাম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “আসলে এস আলম সুগার মিল থেকে তাঁরা প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকায় কেনেন। তার সঙ্গে লেবার চার্জ, ক্যারিং চার্জসহ প্রতি কেজিতে চার টাকা করে খরচ পড়ে। প্রতি কেজি চার টাকা লাভে বিক্রি করলে ৫৮ টাকায় বিক্রি করতে হয়,” জানান সালাম।
রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রমজান উপলক্ষে কিছু পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি হলেও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কিছু পণ্য আমদনিনির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দামের উঠা-নামার প্রভাব দেশীয় বাজারেও পড়ে।
তোফায়েল আহমদ বলেন, “দেশীয় বাজারে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বাড়েনি। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি অনকূলে থাকবে বলে ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করেছেন।”
তবে একাধিক ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন কেউই।
“এবার রমজান শুরুর বেশ আগ থেকেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। যেকারণে রমজান শুরুর পর পণ্যের দাম খুব একটা বাড়ার সুযোগ নেই,” বেনারকে জানান রাজধানীর হাতিরপুলে বাজার করতে আসা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, পবিত্র রমজানের মাসে ব্যবসায়িদের এ ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা উচিত।