রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার দাবি সহিংস হয়ে উঠল
2016.07.28
সুন্দরবনের খুব কাছে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশবাদীদের আপত্তি শেষ পর্যন্ত সংঘাতময় হয়ে উঠল। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে এ সংঘাতের সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. শহিদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থেকে এ উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন পরিবেশবাদীরা।
তবে প্রবল সে আপত্তি আর আন্দোলনের মধ্যেও সুন্দরবনের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৪৯ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। এর প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর হবে না—এমন দাবি করে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত পরিবেশ ছাড়পত্র পায়নি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
আন্দোলনকারীদেরও দাবি, সুন্দরবন ধ্বংস না হওয়ার মত যথেষ্ট প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মিছিলে পুলিশের লঠিচার্জ, আহত শতাধিক
রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন চুক্তি বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে জাতীয় কমিটির মিছিলটি বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হয়। এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রামপাল চুক্তিসহ অন্যান্য দেশবিরোধী চুক্তি বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সহস্রাধিক মানুষের এ বিক্ষোভ মিছিলটি কয়েক দফা বাঁধা পার হয়ে বাংলামটরের কাছাকাছি গেলে পুলিশ প্রথমে বাঁধা দেয় এবং পরে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে।এসময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়। আন্দোলনকারীরা বারবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠি চার্জ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।
শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বেনারকে বলেন, “জাতীয় কমিটির মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে জনদুর্ভোগ বাড়ছিল। তাই বাধ্য হয়েই তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।” এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আটক রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টায় আন্দোলনকারীরা। ফটোঃ বেনার নিউজ।
আন্দোলনকারীরা জানান, পুলিশের ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় ও মুখোমুখি সংঘর্ষে কয়েকজন অসুস্থ ও আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আহতদের পঞ্চাশ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেলেও আনু মুহাম্মদ এ সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি করেন।
আন্দোলন চলবে
এদিকে বাঁধা পেলেও সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এ প্রসঙ্গে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী তাহসিন মাহমুদ বেনারকে বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে। কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই। সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে এই বন ধ্বংস হবে না বলে সরকারের প্রতিটি যুক্তিকেই আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি।”
তিনি বলেন, সকল পরিবেশ সচেতন নাগরিক ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেছেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধসহ সাতদফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
এদিকে জাতীয় কমিটি আন্দোলনের সঙ্গে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে যোগদানের আহবান জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বেনারকে বলেন, “সরকারের কাছে যদি সু্ন্দরবনের চেয়ে যদি কিছু মুনাফা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে জনগণের দায়িত্ব সেটা প্রতিরোধ করা। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। সুন্দরবনকে রক্ষা করতেই হবে।”
এটা জাতীয় ইস্যু উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা কোন দল, ব্যক্তির বিষয় নয়, সারা দেশের মানুষের বিষয়। সকলকে এ আন্দোলনে যোগ দিতে হবে।”
৩০ জুলাই দেশজুড়ে বিক্ষোভ
মিছিলে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামী ৩০ জুলাই দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মিছিলের পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আনু মুহাম্মদ।