তিন বছর পর রানা প্লাজার মালিকসহ ১৮ আসামির বিচার শুরু
2016.06.14
অবশেষে তিন বছর পর বিশ্বজুড়ে আলোড়িত রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ আসামির বিচার শুরু হচ্ছে। ওই ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার মধ্যে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় মঙ্গলবার অভিযোগ গঠন করেছে আদালত।
এর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলেও বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা। কালক্ষেপণের ফলে সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তাঁদের।
অভিযোগ গঠন
মঙ্গলবার এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান। পাশাপাশি আগামী ২৩ আগস্ট মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর তারিখ ঠিক করা হয়েছে। মামলায় মোট ১৩০ জনকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী করা হয়েছে।
এদিকে নির্দেশ অনুযায়ী আদালতে হাজির না থাকায় সাভার পৌরসভার প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, মাহবুবুল আলম, ঠিকাদার নান্টু ও রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
গতকাল মামলার মোট ১৮ জন আসামির মধ্যে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন ১৩ জন। বাকিরা মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।
এই ১৩ আসামি আদালতের প্রশ্নের জবাবে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বিচার চেয়েছেন বলে জানান অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবু। তাঁদের পক্ষে মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার আবেদনও করা হয়। তবে শুনানি শেষে সে আবেদন নাকচ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশের আট তলা রানা প্লাজা ভবনটি ধ্বসে পড়ে। এ ঘটনায় এক হাজার ১৩৫ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই শ্রমিক। আর আহত হন ভবনটিতে কর্মরত সহস্রাধিক শ্রমিক, যাঁদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন।
ওই ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়। ইমারত বিধি না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে ছাড়াও হত্যার অভিযোগে একটি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ আরেকটি মামলা করা হয়।
ভবনটি নির্মাণে নকশায় ত্রুটি, বিনা অনুমোদনে তা সম্প্রসারণ এবং নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন রাজউকের কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। এ মামলার বিচার শুরু হলেও হত্যা মামলাটির অগ্রগতি সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সোমবার হত্যা মামলার ৪১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হওয়ার কথা থাকলেও তৃতীয়বারের মতো তা পিছিয়েছে। অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ১৮ জুলাই নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আসামি যারা
ইমারত বিধি না মেনে ভবন করায় এর মালিক সোহেল রানা ছাড়া অন্যান্য আসামিরা হলেন; তাঁর বাবা আব্দুল খালেক ও মা মর্জিনা বেগম।
এ ছাড়া আছেন সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, সাইট ইঞ্জিনায়ার মো. সারোয়ার কামাল, ভবনটির ভাড়াটিয়া নিউ ওয়েভ বটমসের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, ইথার টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান, আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস এবং ফ্যান্টম অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। তাঁরা মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে যারা আন্দোলন করে আসছেন সেই শ্রমিক নেতারা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “প্রধান প্রধান আসামিরা আটক থাকার পরেও বিচার শুরু হতে তিন বছর লেগে গেছে। এই কালক্ষেপণ হতাশার এবং অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এভাবে সময়ের ঘুরপাকে হাজার শ্রমিক হত্যার বিচার হবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা শঙ্কিত।”