সৌদি আরবের ইয়েমেন সীমান্তে মর্টার হামলায় ২ বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.09.18
Saudi-attack শুক্রবার ইয়েমেন সীমান্তে হুথি বিদ্রোহীদের মর্টার হামলায় সৌদী আরবের জিজানে সামতাহ জেনারেল হাসপাতালে ২ বাংলাদেশি নিহত হন। ১৮ সেপ্টেম্বর,২০১৫
অনলাইন

সৌদি আরবের ইয়েমেন সীমান্তে হুথি বিদ্রোহীদের মর্টার হামলায় নিহত হয়েছেন দুইজন বাংলাদেশি। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ বাংলাদেশি আহত হওয়ার খবর দিয়েছে বাংলাদেশের পররা্ষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হতাহতদের সবাই একটি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়াও পেয়েছেন।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে সৌদি আরবের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশ জেদ্দা থেকে ৭৫০ কিমি দূরে জিজানের সামতাহ জেনারেল হাসপাতালে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

নিহত দুই বাংলাদেশির একজন টাঙ্গাইলের কালিহাতির কামান্না গ্রামের নুরুল হক, অপরজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরের গুলপাকুরিয়া গ্রামের বাতেন মিয়া, পিতা মোহন মিয়া বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আলতাফ হোসেন। এছাড়া আহতরা সামতাহ হাসপাতালেই  চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি। একই তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

নিহতদের পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী লাশ দেশে প্রেরন অথবা সৌদীতে দাফন করা হবে। হতাহতদের ক্ষতিপূরন আদায়ের জন্য সৌদী আরবে বাংলাদেশি কন্সুলেটের পক্ষ থেকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগযোগ করা হচ্ছে, মন্ত্রনালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।


হুথি বিদ্রোহীদের হামলা

ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় বিদ্রোহী হুথি বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশটির সরকারের সমর্থনে সেখানে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট। সৌদি আরবের হামলার জবাবে মাঝে মাঝেই সৌদি সীমান্তে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় হুথি বিদ্রোহীরা। এতে মাঝেমাঝেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

হুথি বিদ্রোহীরা গত ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে নেওয়ার পর থেকেই দেশটিতে অরাজক পরিস্থিতি চলছে। ইতোমধ্যে সেখান থেকে বিদেশিদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও হুথি বিদ্রোহিদের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।

গত মে মাসেও দেশটির  দক্ষিণ প্রদেশে নাজরান সীমান্ত এলাকায় কমর্রত অবস্থায় ইয়েমেনের হুথিদের ছোড়া মর্টারশেলের নিহত হন দুজন বাংলাদেশি।  এছাড়া আগস্ট মাসে সৌদির দক্ষিণাঞ্চলের আসির প্রদেশের একটি মসজিদে আত্মঘাতি বোমা হামলায় চার বাংলাদেশিসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী স্পেশাল উইপোনস অ্যান্ড টেকটিকস (সোয়াত) ইউনিটের ওই মসজিদটিতে হামলার দায় স্বীকার করে নেয় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সে ঘটনায় নিহত বাংলাদেশিদের স্বজনরা সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে এবার হজে অংশ নিয়েছেন। এ খবর জানিয়েছে সৌদি আরবের পত্রিকা আবরনিউজ।


প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, উদ্বেগে আত্নীয়-স্বজন

এদিকে এভাবে দেশটিতে আইএস এবং হুথিদের হামলার খবরে বাংলাদেশিদের মধ্যেও এক ধরনের ভীতি সঞ্চার করেছে। কারণ, এই মুহুর্তে দেশটিতে প্রায় ১৫ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে যেকোন খবর দ্রুত গতিতেই পৌঁছে যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। আর সেখবর যখন কোন দূর্ঘটনার হয়, তখন প্রায় প্রতিটি সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশির স্বজনরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে যান।

এ বিষয়ে ঢাকার গাজীপুরের শহীদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমার বড় ভাই সৌদি আরব প্রবাসী। মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের কারণে যেকোন ঘটনার তাৎক্ষনিক খবর পাই। আর মিডিয়াও এখন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে খবর ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। অন্যান্য দেশের তুলনায় সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর হারও বেশি।  তাই যখনই সৌদি আরবের কোন দূর্ঘটনার খবর পাই, উৎকণ্ঠায় থাকি পুরো পরিবার। বারবার ভাইয়ের কাছে ফোন করি। তার সঙ্গে কথা বলতে পারলেই কেবল নিশ্চিত হই।”

এ বিষয়ে সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আল-আমিন, যিনি পেশায় একজন সাংবাদিকও, বেনারকে বলেন, “গত একমাসে প্রায় একশ জন বাংলাদেশির মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩০-৪০ জন। আর হজ করতে এসে (শুক্রবার পর্যন্ত) মারা গেছেন ৩৫ জন। সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক বেশি। যার কারণে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটলে কোন না কোন বাংলাদেশির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।”

তবে বর্তমানে সৌদিতেও আইএস জঙ্গি আর হুথিদের আক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় নিজেও সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বলে জানান আল আমিন।

এই প্রবাসী  বাংলাদেশি বলেন, “ভয় এবং আতংকের মাঝে থাকি সারাক্ষন। কখন কোন দিক দিয়ে বোমা ফোটে, কিংবা কোন দেয়াল বা ছাদ ভেঙ্গে পড়ে; এসব দুশ্চিন্তা কাজ করে সব সময়। আর টিভিতে বা পত্রিকায় কোন দুর্ঘটনার খবর দেখলেই দেশ থেকে স্বজনদের ফোন আর ম্যাসেজ আসা শুরু হয়।”

গত শুক্রবারও সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে মসজিদ আল-হারামে ক্রেন দূর্ঘটনায় ১০৭ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও রয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় দুই শতাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।