রিমাণ্ডে মানসিক নির্যাতন চলছে,শফিক রেহমানের স্ত্রীর অভিযোগ
2016.04.26
পুলিশি হেফাজতে থাকা প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানের ওপর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে তাঁর পরিবার। বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকেও জীবনহানির শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
যদিও এই দাবি ‘সত্য’ নয় বলে জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বক্তব্য মেনে না নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। আর পুলিশকেও এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।
মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের চক্রান্তের এক মামলায় গত ১৬ এপ্রিল যায় যায় দিন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই সাংবাদিক বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় মোট দশ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন।
রিমান্ডে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তার সহধর্মিণী তালেয়া রেহমান।
প্রবীণ এই সাংবাদিকের স্ত্রী মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “একজন ৮১ বছরের মানুষকে ৮-১০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ওইটাই টর্চার। তবে শারীরিক নির্যাতন করেছে কিনা সেটার প্রমাণ আমি পাইনি।”
স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও তিনি তা পারেননি জানিয়ে তালেয়া বলেন, “তাঁর (শফিক রেহমান) সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা অনেক লম্বা প্রক্রিয়ার ব্যাপার, সেটা করা হয়ে ওঠেনি। তবে দুইবার দেখা হয়েছে আদালতে। প্রথমবার ভালই ছিল। পরেরবার খুব বিমর্ষ লাগছিল।তাঁর কাছ থেকে মিথ্যা সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।”
জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে শফিক রেহমানের স্বীকারোক্তি ও তিন সঙ্গীর নাম প্রকাশ সম্পর্কে পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছে—তা সত্য নয় বলে দাবি করেন তালেয়া রেহমান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বেনারকে বলেন, “আমি একেবারেই এটা বিশ্বাস করি না। যেই লোকটা একটা পিঁপড়া পর্যন্ত মারতে পারে না, সেই লোকটা একটা খুনের ষড়যন্ত্রে জড়াবে—এটা আমাকে মেরে ফেললেও বিশ্বাস করব না।”
“আমাদের ৫৯ বছরের দাম্পত্য জীবন। আমি তাকে এতগুলো বছর ধরে চিনি। এত বছরে কোনোদিন একটা মানুষের ক্ষতি তিনি করেননি। আজ এত বছর পরে তিনি কারও ক্ষতি করবেন—এটা হতে পারে না। তিনি ভিন্ন রকম মানুষ। তিনি সামান্য রক্তই দেখতে পারেন না,” জানান তালেয়া।
রেহমানের জীবন হানির শঙ্কা বিএনপির
এদিকে রিমান্ডে শফিক রেহমানকে নির্যাতনের খবর পাওয়ার দাবি করে তাঁর জীবনহানির শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, “রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শফিক রেহমানের মতো বরেণ্য গুণী মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে—এমন খবরে শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন বিশ্ব সমাজও।”
তিনি বলেন, “অসুস্থ শফিক রেহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের তথ্য পেয়ে তার জীবন নিয়ে স্ত্রীর মতো আমরাও আশঙ্কা প্রকাশ করছি।”
রুহুল কবির রিজভী শফিক রেহমানের স্ত্রীর দাবির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “তিনি (তালেয়া রেহমান) দাবি করেছেন, প্রথম দফা রিমান্ডের পর আদালতে শফিক রেহমানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আদালতে তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তার হাতের কয়েক জায়গায় ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে। তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হয়েছে বলেও তালেয়া রহমান জানিয়েছেন।”
“শফিক রেহমান গুরুতর অসুস্থ। এরপরও গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়নি। আমরা তার জীবন নিয়ে শঙ্কিত,” জানান রিজভী।
শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে রিজভী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে করা মামলায় অপহরণ এবং হত্যার চেষ্টার কোনো অভিযোগ নেই। এটা একটি ঘুষের মামলা, যার সঙ্গে শফিক রেহমানের নাম গন্ধও নেই। অথচ তাকে ধরার জন্য আগে থেকেই একটা ভয়ংকর রকমের চক্রান্ত করে একটা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনার পথে হেঁটেই তাকে এখন নির্যাতন করা হচ্ছে।”
নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয়: পুলিশ
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে নির্যাতনের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “শফিক রেহমানকে নির্যাতন করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ সত্য নয়। আমরা কাউকে কোন ধরনের টর্চার (নির্যাতন) করি না। তার স্ত্রীর এ ধরনের অভিযোগ থাকলে, সমস্যা নেই। আদালতে গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করার অধিকার ওনাদের আছে।”
নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি
তবে পুলিশের এই দাবির প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, দোষী হলে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে শফিক রেহমানের সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “আমরা আমাদের সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারীর নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা, তাদের কাছ থেকে অতীতে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দেখেছি। তাই আমরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।”