আদালতের রায়ে আটকে গেল লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি
2016.05.02
সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর এবার আদালতের রায়ে আটকে গেল বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার নেতারা মনে করছেন, এর ফলে লিবিয়ার শ্রম বাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ।
অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেছেন, নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালতও তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। এই উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মত দেন তিনি।
অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে গত বছরের অক্টোবর থেকে লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। সে নিষেধাজ্ঞা ডিঙাতে বারবার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা।
তবে সর্বোচ্চ আদালত লিবিয়ায় শ্রমিক না পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এমন রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা। শ্রম বাজারটি বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য চিরতরে বন্ধের আশঙ্কাও করেছেন তারা।
গতকাল সোমবার এক রায়ে লিবিয়া যেতে আগ্রহী ৭৪ ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া অর্থ তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এই অর্থের সঙ্গে ১০ শতাংশ সুদও গুনতে হবে এজেন্সিগুলোকে।
সরকারিভাবে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধের আগেই এসব ব্যক্তি লিবিয়া যাওয়ার ভিসা পেয়েছিল। সেসব ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় লিবিয়া যেতে এসব ব্যক্তিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিতে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন বায়রার কতিপয় সদস্য। হাইকোর্ট তাদের এনওসি দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের অনুমতি চেয়েছিল। সোমবার হাইকোর্টের সেই আদেশ স্থগিতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ। এর ফলে আপাতত লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞাই বহাল থাকল।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে ওই অর্থ উদ্ধার করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেওয়া অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, “জীবনের ঝুঁকি থাকার পরও লিবিয়ায় লোক পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন এক দল ব্যবসায়ী। আদালতের এই আদেশের ফলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলো।”
লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর ২০১১ সাল থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা চলছে। বিদ্রোহীদের বিভিন্ন দল ও উপদলের মধ্যে লড়াই গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। এ ছাড়া লিবিয়ার একটি অংশ দখল নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি দল আইএস।
২০১১ সালে যুদ্ধ চলা অবস্থায় প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিকে লিবিয়া থেকে ফেরত আনা হয়। এরপর আবারও স্বল্প পরিসরে শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়। তবে পরিস্থিতির অবনতির ঘটায় ২০১৫ সালে ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশি নাগরিকদের লিবিয়া ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পরে লিবিয়া যাওয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন শফিকুল ইসলাম, মো. দিদারুল ইসলামসহ ৭৪ ব্যক্তি। প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ৩ এপ্রিল রুলসহ এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে ভিসাপ্রাপ্তদের ১৫ দিনের মধ্যে এনওসি দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষ ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। সোমবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টির ওপর শুনানি হয়।
শ্রম বাজার হারানোর শঙ্কায় বায়রা
আদালতের এমন নির্দেশে হতাশা প্রকাশ করেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা। অন্যান্য অনেক দেশ লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠাচ্ছে—এ কথা দাবি করে তাঁরা বলছেন, বাজারটি বাংলাদেশের হাতছাড়া হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বায়রার সভাপতি মো. আবুল বাশার বেনারকে বলেন, “লিবিয়ায় এখন ভারত, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়া শ্রমিক পাঠাচ্ছে। ওরা যেখানে লোক পাঠাচ্ছে; সেখানে আমাদের কি অসুবিধা সেটা বুঝি না। এ ক্ষেত্রে আমাদের হাত থেকে লিবিয়ার বাজারটি চলে যেতে পারে। সে বিষয়টি সরকারের ভাবা উচিত।”
দেশটির পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক দাবি করে তিনি বলেন, “লিবিয়ার চেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে ইরাকে। অথচ সেখানে বাংলাদেশ কর্মী পাঠাচ্ছে।”