তাজিয়া মিছিলে ছুরি, কাঁচি নেওয়া যাবে না,পূজায় ব্যাগ ও দাহ্য বহন নিষিদ্ধ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.29
তাজিয়া মিছিল ও দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬।
ডিএমপি নিউজ

এবার শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে ধারালো অস্ত্র (ছুরি, কাঁচি) বহন করা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত বছর তাজিয়া মিছিলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়া মিছিল শুরুর প্রস্তুতির সময় গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, মিছিলে কেউ ধারালো অস্ত্র নিয়ে বের হতে পারবে না।

হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ও কারবালার যুদ্ধে শাহাদত বরণকারী ইমাম হোসেন (রা.) এর স্মরণে ও তাঁর স্মৃতির প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাতে মাতম করে দেহের রক্ত ঝরিয়ে তাজিয়া মিছিল করে থাকেন শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা।

আরবি ‘তাজিয়া’ শব্দটি উর্দু ও ফারসি ভাষায় প্রচলিত। শব্দটির সাধারণ অর্থ শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা। তাজিয়া মিছিলে মাতম করে, বুক চাপড়িয়ে ও জিঞ্জির দিয়ে পিঠের ওপর আঘাত করে নিজেদের রক্তাক্ত করে শোক প্রকাশ করা হয়।

“এই মিছিলে যা হয়, তা কোনো ধর্মীয় অনুশাসন নয়। এটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশও ঘটে থাকে,” বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা ।

এদিকে ডিএমপি নিউজ ওয়েবসাইটে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বরাত দিয়ে বলা হয়, শিয়া মুসলিমদের তাজিয়া মিছিল ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজার বিসর্জন একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে শিয়া ও হিন্দু  সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কমিশনার তাজিয়া মিছিলে দা, কাঁচি-ছুরি ইত্যাদি নিয়ে মিছিলে না যাওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।

“গত বছর দুষ্কৃতিকারীরা যে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় তা শুধু হোসেনী দালান নয়, পুরো দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর বিরাট আঘাত। এবার পুলিশের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তা নিরাপত্তার স্বার্থে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা মেনে নেবেন,” জানান হোসেনী দালান ইমামবাড়ার তত্ত্বাবধায়ক এম এম ফিরোজ হোসেন।

আগামী ১০ মহররম পবিত্র আশুরা পালিত হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়ে থাকে। আশুরা অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।

হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (রা.) কারবালার ফোরাত নদীর তিরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদত বরণ করেন। এই শোক ও স্মৃতিকে স্মরণ করে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরা পালন করা হয়।

এদিকে দুর্গাপূজা ও আশুরা উপলক্ষে রাজধানীতে কড়া ও নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, থানা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার ও জনগণের সহায়তা নিয়ে যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করা হবে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেন তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে উৎসবমুখর পরিবেশে ও নিরাপদে উদযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে নিষ্ঠা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। নিউজরুম ফটো।সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬।

পূজা মণ্ডপে পুলিশের নজরদারি প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি, আর্চওয়ে গেট থাকবে ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে। নাশকতা এড়াতে পূজা মণ্ডপে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।

তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে জনগণকে ব্যাগ ও দাহ্য বহন না করার অনুরোধ করেন এবং তল্লাশির সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ সাহায্য করার আহ্বান জানান।

এদিকে আসন্ন দুর্গা পূজায় যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ।

“আমরা পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই,” বেনারকে জানান রানা দাশ গুপ্ত।

তাঁর মতে, দুর্গাপূজায় সরকারি ছুটি তিন দিন করা উচিত।

 

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।