রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তারেকসহ এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.09.29
20160927-Tareq-Rahman620.jpg সৌদি আরবে সম্প্রতি হজ পালন করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান(সাদা কাপড় পরা)।
ছবি: বিএনপি

রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় একজন সাংবাদিকসহ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশের একটি আদালত। বৃহস্পতিবার মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আগামী ১ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বিষয়ক প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হয়।

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানের বক্তব্য লন্ডন থেকে সরাসরি সম্প্রচার করায় তারেক রহমান, বেসরকারি টেলিভিশন ইটিভির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম এবং ওই চ্যানেলের দুই সাংবাদিক কনক সারোয়ার ও মাহাথীর ফারুকীর বিরুদ্ধে ওই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি দায়ের করা হয়৷

মামলায় তিন সাংবাদিকসহ চার আসামির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচারের মাধ্যমে আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ঘৃণা তৈরির অভিযোগ আনা হয়।

তবে এটাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণে সরকারের অপচেষ্টা হিসেবে দেখছেন সরকারবিরোধী সাংবাদিকদের সংগঠন। সরকার বিরোধী মতামত প্রকাশ বন্ধ করার লক্ষ্যে ওই মামলাটি দায়ের করা হয় বলে মনে করেন তাঁরা।

আসামিদের মধ্যে একুশের টিভির সাবেক চেয়ারম্যান সালাম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সাংবাদিক কনক উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বেনারকে জানান, “রাষ্ট্রদ্রোহ ও ১৯২২ সালের পুলিশ অ্যাক্ট (ইনসাইটমেন্ট অব ডিস-প্রফেশন)-এর ৩ ধারায় চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। তবে আসামি তারেক রহমান ও একুশে টিভির প্রতিবেদক মাহাথীর ফারুকী খান পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান গত সাত বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ ছাড়া মুদ্রা পাচারের একটি মামলায় তার অনুপস্থিতিতেই সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর শিল্পাঞ্চল থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার এই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার সেটি বিচারকের কাছে উপস্থাপন করা হয়।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে আসামিরা আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি প্রদর্শন ছাড়া আর কিছু নয়।

গত বছরের ৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে লন্ডনে দেওয়া তারেকের বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচারের পর ৮ জানুয়ারি উল্লিখিত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক বোরহান উদ্দিন। এর আগে ৬ জানুয়ারি ইটিভির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সালাম গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অনিয়মিতভাবে বেশ কিছুদিন ইটিভি সম্প্রচার বন্ধ থাকে।

লন্ডনের ওই অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছিলেন তারেক রহমান। পরে তার বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।

এর কিছুদিন পরে ইটিভির মালিকানায় পরিবর্তন আসে। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার ঘনিষ্ঠ লোকজনই এখন চ্যানেলটি পরিচালনা করছে।

গত ৮ অক্টোবর অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২ ধারা অনুযায়ী নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এস আলম গ্রুপ কর্তৃপক্ষ একুশে টেলিভিশন লিমিটেডের শেয়ার, ট্রেডমার্ক, সার্ভিস মার্ক, লোগো ইত্যাদিসহ সবকিছু কিনে নেয়। গত বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটির দায়িত্ব গ্রহণ করে।

এভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা গণমাধ্যমকেসরকারিকরণকরার উদ্যোগকে স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন সরকারবিরোধী সাংবাদিক নেতারা।

প্রসঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার বেনারকে বলেন, “বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নোংরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইটিভির দুইজন সাংবাদিক, সাবেক চেয়ারম্যান ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা তারই বড় উদাহরণ।”

তিনি বলেন, “দেশে সরকারি স্তবক ও গুণকীর্তন করা গণমাধ্যম টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। সুস্থ, স্বাধীন গণমাধ্যম পরিচালনা করার মত অবস্থা আর নেই।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।