হানাহানি ও প্রাণহানির ইউপি নির্বাচন শেষ হচ্ছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.06.03
UP-Election620.jpg ইউনিয়ন পরিষদের শেষ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। ব্যালটবাক্স নেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে। জুন ৩, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

অশান্ত পরিবেশের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে সাত শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। শেষ ধাপে এসে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করে বিশেষ আলোচনায় এসেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।

সরকারি ওই কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন টেলিফোনে বেনারকে বলেন, স্থানীয় সাংসদসহ তিন জনকে আসামি করে এ মামলা করা হয়।

অন্য দুই আসামি হলেন; বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম ও বাঁশাখালী ওলামা লীগের সভাপতি আখতার হোসাইন। তাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের এমপি মোস্তাফিজুরের ব্যক্তিগত সহকারী ও স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।

পছন্দমতো নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় গত বুধবার বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে মারধর করেন স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন তার দুই সহযোগী।

সাংসদকে গ্রেপ্তার করুন: বিএনপি

উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি । শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীতে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, কমিশনের উচিত ছিল ওইদিনই সাংসদকে গ্রেপ্তার করা।

“নির্বাচনী কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় অবিলম্বে অভিযুক্ত সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে হবে,” জানান নাছির উদ্দিন। তার অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘ফর্দ অনুযায়ী’ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ‘নিয়োগ না দেওয়ায়’ গত বুধবার ওই এমপি ও তার লোকজন ইউএনও কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তাকে মারধর করেন।

অস্থির পরিবেশে আজ শেষ নির্বাচন

গত পাঁচ ধাপের নির্বাচনে পরিবেশ মাত্রাতিরিক্ত অস্থির হয়ে উঠেছে। শনিবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে খোদ কমিশনও শঙ্কিত। ইতিমধ্যে কমিশন একাধিক চিঠি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছে, ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।

গত ২২ মার্চ থেকে ইউপি নির্বাচন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ৩৮৬টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। পাঁচ ধাপেই বিভিন্ন জায়গায় কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ ২৮ মে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের দিন ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গণমাধ্যমের হিসাবে সহিংসতায় ১০২ জন নিহত হয়েছেন। আহত প্রায় দশ হাজার। অবশ্য বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের হিসাবে, এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১২৫ পার হয়েছে।

“এই নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা নজিরবিহীন। এমন নির্বাচনের কোনও মানে হয় না। যারা যোগ্য প্রার্থী এবং ভোট পেয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন, তাঁদের ওপরও ভোট ডাকাতির কালিমা পড়বে,” বেনারকে জানান স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে যে বিভেদ ও বিভাজন সৃষ্টি হলো, এর প্রভাব অনেকদিন পর্যন্ত চলবে। এর ফলে নির্বাচন শেষ হলেও হানাহানি, খুন ও নৈরাজ্য চলতে থাকবে।

এবারের নির্বাচনে শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। গুটি কয়েক জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রত্যাহার এবং সাতক্ষীরার এসপি ও পাঁচ ওসিকে ডেকে এনে ভর্ৎসনা করা ছাড়া নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা দেখাতে পারেনি কমিশন।

“কমিশনের কাজ নির্বাচন পরিচালনা করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কমিশনের, এটা কোথাও বলা নেই। আইন অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তার বাহিনীকে নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে,” বেনারকে জানান নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ।

তবে কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েল কাজকর্মে সমন্বয় নেই। গত ৮ মে কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলেছে, ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু অনেক জায়গায় লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন। চিঠিতে কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির অনুরোধ জানায়।

গত সপ্তাহের একই রকম তাগিদ দিয়ে কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম আবারও চিঠি দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু কমিশনের তাগিদের পর কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় কিছুই জানায়নি।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, “এ ক্ষেত্রে কমিশন নিজেদের দায় মন্ত্রণালয়ের ওপর কেন চাপাচ্ছে? কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী মাঠে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ অন্যান্য বাহিনী মোতায়েন আছে।”

সামাজিক দ্বন্দ্বের ফল:

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ঘটে যাওয়া সহিংসতাকে সামাজিক দ্বন্দ্বের ফল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

গতকাল শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী এ মন্তব্য করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার দায় কে নেবে? জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণে সহিংসতা হয়। এর দায় কেন আমরা নিব? আর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার কাজ নির্বাচন কমিশনের। আমরা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে পারি।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।