দুই কোটিরও বেশি শিশু খাবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল
2016.07.14
১৬ কোটি মানুষের দেশে দুই কোটিরও বেশি শিশুকে একযোগে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। বাড়ন্ত শিশুদের ভিটামিনের ঘাটতি মেটাতে এই উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিদেরা।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ভিটামিন এ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইনের ফলে দেশে শিশুদের রাতকানা রোগে আক্রান্তের হার ০.০৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৯৮২ সালে এই হার ছিল ৩.৭৬ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক জনগুরুত্বপূর্ণ এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের জানান। শনিবার থেকে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে।
ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সেদিন শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি তাকে ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ানোসহ নানারকম পুষ্টি বার্তা প্রচার করা হবে।
ওইদিন ৬ থেকে ১১ মাস বয়সের সব শিশুকে একটি নীল রঙের ক্যাপসুল এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সের শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
দেশে এক লাখ ২০ হাজার স্থায়ী কেন্দ্রের পাশাপাশি অতিরিক্ত ২০ হাজার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট প্রভৃতি স্থানে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রগুলো বসবে।
ক্যাম্পেইন কর্মসূচি শেষে বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাদপড়া শিশুদের ক্যাপসুল সেবন করাবেন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
নিয়মিত এ ক্যাম্পেইনের ফলে শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়ে আগের চেয়ে সাধারণ মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে।
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ও দুই সন্তানের জননী নাসিমা বেগম বেনারকে বলেন, “ভিটামিন এ ক্যাপসুল শিশুদের জন্য কতটা জরুরি, সেটা সরকারের নিয়মিত ক্যাম্পেইনের ফলে দেশের শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব মা-ই এখন জানেন।”
স্বাস্থ্যবিদদের মতে, শরীরের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো ভিটামিন, যা ছাড়া শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যহত হয়। বেশির ভাগ ভিটামিন শরীরে তৈরি হয় না। খাবারের মাধ্যমে এর চাহিদা পূরণ করতে হয়।
তাঁরা বলছেন, অসচেতনতা ও দারিদ্র্যের কারণে সুষম খাবারের অপ্রাপ্যতা থেকে শিশুদের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। বিষযটি মাথায় রেখেই বছরে দুইবার ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে সরকার।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা পায়।
রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. জাকির হোসেন বেনারকে বলেন, “এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রাতকানা রোগ হয়, যা শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়। এই ভিটামিনের অভাব ডায়রিয়া রোগীকে মৃত্যর মুখে ঠেলে দিতে পারে।”
তিনি বলেন, ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এবং সেবনে শিশুদের সাধারণত কোনো সমস্যাই হয় না। এর অভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়ে নানা সংক্রমণে শিশুমৃত্যু ঘটতে পারে।
“তবে শুধু শিশুদের জন্য নয়, বড়দেরও ভিটামিনের প্রয়োজন রয়েছে। শরীরের ত্বক খসখসে হওয়া, ফুসফুসের রোগ, চোখে ছানি পড়া প্রভৃতি রোধ করে ভিটামিন এ। বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করে এই ভিটামিন,” জানান ডা. জাকির।