মুক্ত-চিন্তার লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা, স্ত্রী বন্যা আহত


2015.02.26
bd-torchlight-620-March2015 ব্লগার অভিজিৎকে হত্যার প্রতিবাদে পরদিন.২৭ ফেব্রুয়ারি’১৫ রাতে তাঁর স্মরণে ঢাকায় মশাল মিছিল বের হয়।
নুরফটো/এএফপি

আমেরিকার আটলান্টা প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়কে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিতের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হামলায় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও।  ঘটনার ৪ দিন পর লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সেই শাফিউর রহমান ফারাবীকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে, যিনি এর আগে.২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর ফেইসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান।
লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার দায় আনসার বাংলা-৭ নামের একটি সংগঠন স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এস এম শিবলী নোমানের ভাষ্য, আনসার বাংলা -৭ নামের একটি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করে টুইটারে একটি পোস্ট দিয়েছে। হামলাকারী মৌলবাদী জঙ্গিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে প্রতিবাদে অংশগ্রহনকারী ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিকবৃন্দ ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। বিবিসি,আল-জাজিরা, এপি, এএফপি ও গার্ডিয়ান সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অভিজিৎ হত্যার ঘটনা ফলাও করে প্রচার করেছে।
এদিকে, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র এক প্রেস ব্রিফিং-এ অভিজিতের হত্যা তদন্তে বাংলাদেশ সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এফবিআই-এর তদন্ত সহযোগিতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অভিজিতের মরদেহকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানায় ছাত্র-শিক্ষক ও তার গুণগ্রাহীরা। পারিবারিক ইচ্ছা অনুসারে অভিজিতের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের এনাটমি গবেষণার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দান করা হয়।

নায়েগ্রা ফলে তোলা অভিজিৎ রায় ছবিটি ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন ২০১৩ সালের জুলাইতে।
নায়েগ্রা ফলে তোলা অভিজিৎ রায় ছবিটি ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন ২০১৩ সালের জুলাইতে।
ফেসবুক/ অভিজিৎ
লেখালেখি নিয়ে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিতের এবার একুশের বইমেলায় দুটি বই প্রকাশ হয়েছে, সে কারণেই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অজয় রায়ের এই ছেলে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উল্টো দিকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন সড়কে হামলার পরপরই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় দুজনকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অভিজিৎ ও বন্যা একটি রিকশায় চেপে টিএসসির দিকে যাচ্ছিলেন। দুর্বৃত্তরা রিকশা থামিয়ে ফুটপাতে নামিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধারাল অস্ত্রের জখম নিয়ে অভিজিৎ ও বন্যাকে হাসপাতালে আনা হয়।
মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে সঙ্কটাপন্ন অভিজিৎকে সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।
হাসপাতালে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলীও বলেন, “চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে অভিজিৎ মারা গেছেন।”বন্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
শাহবাগ থানার এসআই সোহেল রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানার চেষ্টা করছে, বিষয়টি কেন ঘটেছে।”
অভিজিৎ ও বন্যার ওপর কারা হামলা চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি কোনো সূত্রে। তবে ঘটনাস্থলে দুটি চাপাতি পাওয়া গেছে।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে একইভাবে চাপাতি দিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকেও রাজধানীর মিরপুরে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডেও জঙ্গিবাদীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।
অভিজিতের ওপর হামলার খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “যারা অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, তারাই একইভাবে আবার হামলা চালিয়েছে।পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় জার্মানীতে মারা যান।”
ড. অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান।
অভিজিৎ রায়ের বই বাংলা বই বিক্রির ওয়েবসাইট ‘রকমারি ডটকম’ থেকে সরাতে হুমকি দিয়েছিলেন হত্যাকাণ্ডে উসকানিদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার ফারাবী শফিউর রহমান।
শাহবাগ আন্দোলনের মধ্যে ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর ফেইসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ফারাবীকে। পরে জামিনে ছাড়া পান ফারাবী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।