বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পেছানোর কথা ‘বিবেচনা’ করবে নির্বাচন কমিশন

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.11.20
ঢাকা
বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পেছানোর কথা ‘বিবেচনা’ করবে নির্বাচন কমিশন বিএনপির ডাকা হরতালে দূর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল। ছবিটি ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা। ২০ নভেম্বর ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও শরিকরা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হলে পুনঃতফসিলের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনকে জানাতে হবে। বিরোধীরা না জানালে তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ রোববার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তফসিল পেছানোর পক্ষে মত দেওয়ার পর দিনই কমিশনার রাশেদা এ কথা বললেন।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তফসিল পিছিয়ে দিলেই নির্বাচনে আসবে না বিএনপি। তাদের নির্বাচনে আনার একমাত্র পথ রাজনৈতিক সমঝোতা।

গত ২৮ অক্টোবর দলীয় সমাবেশে ‘পুলিশি হামলা’ ও ‘নির্বিচারে’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। একই কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতে ইসলামী ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলো।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলেছে, একতরফা নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টার মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন দেশকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

‘আসতে চাইলে ওয়েলকাম’

সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। 

“বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইলে তফসিল পেছানো হবে কি না?” সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা নির্বাচনে আসতে চাইলে “নিশ্চয়ই আমরা আলোচনা করব। সিদ্ধান্ত নেব। উনারা সিদ্ধান্ত নিলে, আসতে চাইলে অবশ্যই আমরা ওয়েলকাম করব।”

“উনারা যদি আসেন, আমরা কমিশনাররা বসব। আইন-কানুন দেখব, তারপর যেটা সিদ্ধান্ত হয়… অগ্রিম কিছু বলতে পারব না,” বলেন রাশেদা সুলতানা।

বিএনপিসহ সব দলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সকল দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সর্বদা স্বাগত জানাবে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়।”

‘রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে আসবে না’

বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইলে তফসিল পেছানো হবে, এ ধরনের কথা বলে “নির্বাচন কমিশন তার দায় এড়াচ্ছে” বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল। 

সোমবার তিনি বেনারকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের উচিত সরকারকে এ কথা বলা যে, পুলিশ হত্যার সঙ্গে যেসব ব্যক্তি সরাসরি জড়িত, তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন সাপেক্ষে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিন; যত নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে তাদের মুক্তি দিন।”

“যদি সরকার এ কাজগুলো করে তবে আলোচনার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে,” বলেন আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, “সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। মহাসচিব থেকে শুরু করে সব বড়ো বড়ো নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে না।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামও মনে করেন, তফসিল পিছিয়ে প্রকৃতপক্ষে কোনো লাভ হবে না, “একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে আসবে না।”

সোমবার তিনি বেনারকে বলেন, “যদি সরকার এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়ার কথা বলে, তবুও বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারবে না। কারণ তাদের নির্বাচন করার লোক কোথায়! তাদের কয়েক দিন পরপর আদালতে দৌড়াতে হবে। সুতরাং, একটি রাজনৈতিক সমাধান দরকার।”

এদিকে ২৮ অক্টোবরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার ও মামলা প্রত্যাহার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সোমবার বেনারকে বলেন, “পুলিশ হত্যা তো একা কেউ করেনি। জাজেস কমপাউন্ডে কোনো একক ব্যক্তি যায়নি। প্রধান বিচারপতির বাসার সামনে একা কোনো ব্যক্তি অগ্নি সংযোগ করেনি। পুলিশ হাসপাতালে কেউ একা হামলা করেনি, অগ্নিসংযোগ করেনি। আমাদের কাছে সব ভিডিও আছে।”

“এগুলোর জন্য মামলা হবে না? এগুলোর জন্য আইনের মুখোমুখি হতে হবেই,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোববার থেকে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষে সোমবার অজ্ঞাত স্থান থেকে ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার আরেক দফা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এক দিনে বিএনপির ৫৪ নেতার জেল

২০১৫ সাল ও কাছাকাছি সময়ে দায়ের হওয়া ঢাকার দুটি ও রংপুরে একটি মামলায় সোমবার মোট বিএনপির ৫৪ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) বিচারক আতাউল্লাহ ও মোহাম্মদ শেখ সাদী।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন—বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ অনেকে।

এদিন রংপুরে ২০১৩ সালের সহিংসতার মামলায় বিএনপির পাঁচ নেতাকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কৃষ্ণকান্ত রায়।

সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ১৭ হাজার ১৮১ জন, মোট মামলা কমপক্ষে ৭২৪, আহত কমপক্ষে ছয় ৪০৪ এবং মোট মৃত্যু ১৫ জন।

তিনি বলেন, ওই সময়ে ২০টি ‘মিথ্যা’ মামলায় নয় জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশসহ ১৫৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

এদিকে আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদনের শুনানি না করে ২২ নভেম্বর শুনানির তারিখ ঠিক করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল বিন আতিক। 

প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভেঙে ইটপাটকেল নিক্ষেপের মামলায় ২৯ অক্টোবর থেকে কারাগারে রয়েছেন মির্জা ফখরুল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।