পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় নেতাসহ গ্রেপ্তার ৮১
2023.03.06
ঢাকা
পঞ্চগড় জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিএনপি নেতাসহ কমপক্ষে ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দুটি হত্যাকাণ্ড এবং হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গত দুই দিনে সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে আট হাজারের বেশি মানুষকে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এস. এম সিরাজুল হুদা সোমবার বেনারকে বলেন, “এসব মামলায় ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি বলেন, “সোমবার থেকে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দোকানপাট খুলেছে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা নজরদারি করছে।”
পঞ্চগড় শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে সুন্নি মুসলিমদের মিছিল বের হয়। শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে করতোয়া সেতুর দিকে যাওয়ার পথে মিছিলের গতি রোধ করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। মিছিলের একটি অংশ আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন।
সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলা চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন। সংঘর্ষে দুজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। গভীর রাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এর মধ্যে সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
“আমাদের ওপর যে তাণ্ডব হয়েছে তা যুদ্ধ ক্ষেত্রের চেয়েও বেশি,” বেনারকে বলেন আহমদিয়া মুসলিম জামাতের মুখপাত্র আহমদ তাবসির চৌধুরী।
যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সোমবার ঢাকায় সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সহিংসতার ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জড়িত। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার বিএনপি’র এক নেতা স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জামায়াতের কর্মী ও বিএনপি নেতারা জলসা করতে বাধা দেন। এক পর্যায়ে তাঁদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেন। যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেখানেও আগুন দেওয়া হয়। এতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একজন মারা যান। একজন শিবির নেতা, যিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তিনিও এই ঘটনায় আহত হন এবং পরে মারা যান।”
“এখন পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের একজন বিএনপি নেতা ফজলে রাব্বী। ওই বিএনপি নেতা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাঁরা অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য এসেছিলেন এবং ঘটনার নেপথ্যে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন,” বলেন কামাল।
এই ঘটনায় পুলিশের কোনো ব্যর্থতা আছে কি না তদন্ত করে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো গাফিলতি থাকলে তা অবশ্যই দেখা হবে।”
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “শুধু পঞ্চগড় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা রকম ঘটনা ঘটলে সেখানে অকারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের পুরোনো খেলায় নেমেছে সরকার।”
“পঞ্চগড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পেরে সরকার এখন নিজেদের ব্যর্থতা বিএনপি’র ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে,” অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
রেলমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ
পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সোমবার সকালে আহম্মদনগর পরিদর্শন করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “একটি সম্প্রদায়ের ওপর এই ধরনের হামলা শুধু দুঃখজনক নয়, একটি সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার খর্ব করার মতো জঘন্য অপরাধ।”
“যেভাবে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, খুন করা হয়েছে তা একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। অপরাধীদের আইন ক্ষমা করবে না। ঘটনার সময় কারো কোনো গাফলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,” বলেন তিনি।
তাবসির বেনারকে জানিয়েছেন, রেলমন্ত্রী শালসিড়ি গ্রাম পরিদর্শনে যাওয়ার পরে সেখানে আব্দুর রহমান নামে এক স্থানীয় ব্যবসায়ী উপস্থিত হন। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েকজন আব্দুর রহমানকে দেখিয়ে মন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “রহমানের ছেলে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। যারা হামলা ভাঙচুরে করেছেন তারা আপনার আশেপাশে অবস্থান করছে।” রেলমন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন।