কারণ দর্শানো ছাড়াই কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পারবে দুদক
2023.03.16
ঢাকা
কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে অপসারণ সংক্রান্ত আলোচিত বিধিটিকে বৈধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত।
ফলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে পরবর্তী তিন মাসের বেতন পরিশোধ করে চাকরি থেকে অপসারণ করতে পারবে দুদক।
দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) বিধি অনুসারে, কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা যায়। এই বিধিটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করায় বাতিল ঘোষণা করেছিল হাইকোর্ট বিভাগ।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এই রায় দেয়।
“আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে বিধিটি বৈধতা পেয়েছে। ফলে বিধিটি বহাল থাকছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলা যাবে,” বেনারকে বলেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তিনি জানান, এদিন আপিল বিভাগ ৫৪(২) বিধি নিয়ে দুদকের চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের করা রিটটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে।
গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি এই বিধির ক্ষমতাবলে শরীফকে চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদক। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শরীর উদ্দিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করেছিলেন।
এই বিধি নিয়ে আগেই আপিল করে দুদক। হাইকোর্ট বিভাগ জানায়, আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার পরে শরীফের দায়ের করা রিটের শুনানি হবে।
হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে গত বছরের ১৬ জুন শরীফ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছিলেন। চলতি বছরের ২ মার্চ দুদকের করা আপিলের সঙ্গে শরীফের করা লিভ টু আপিল আবেদন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের আপিল বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
এর আগে ৫৪(২) বিধি অনুসারে মো. আহসান আলী নামে দুদকের আরও এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তিনিও এই বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট বিধিটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
নিজেকে ভিকটিম মনে করি: শরীফ
আদালতের রায়ের পরে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শরীফ বেনারকে বলেন, “আমি রায়ের বিষয়টি শুনেছি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নিজেকে একজন ভিকটিম মনে করি। সর্বোচ্চ আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সম্পর্কে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী মনজিল মোরশেদ বেনারকে বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় আসলে চূড়ান্ত, এটা নিয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। এটা অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে।”
“তবে দুদক কর্মীদের অধিকারের বিষয় বিবেচনায় রায়টি অন্যরকম হলে ভালো হতো,” বলেন এই আইনজীবী।
শরীফের চাকুরিচ্যুতি সম্পর্কে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বেনারকে বলেন, “দুদক কোনো কিছুই আইনের বাইরে করেনি। প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের জন্যই দুদক বিভিন্ন সময়ে নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।”
“দুদক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পেছনে যৌক্তিক কারণ ছিল বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে,” বলেন তিনি।