চীনা প্রেসিডেন্টের আশ্বাসের পরও ব্রিকসের সদস্যপদ পেল না বাংলাদেশ
2023.08.24
ঢাকা
অনেকটা অপ্রত্যাশিত হলেও অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের সদস্যপদ পায়নি বাংলাদেশ।
যদিও জোটের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বুধবার শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন বেইজিং বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রদানকে সমর্থন করবে।
আবেদনকারী ২৩ দেশের মধ্য থেকে আর্জেনটিনা, মিশর, সৌদি আরব, ইথিওপিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সদস্যপদ দিতে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সম্মত হয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত জোট ব্রিকস।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা ও বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার তাগিদ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি দফায় দফায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এই প্রেক্ষাপটে ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়া ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক কূটনীতিকরা।
চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে এমন ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মনে করে রাশিয়া ও চীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁর সরকারকে সরাতে চাচ্ছে, যদিও মার্কিন সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকা না গেলে কিছু হবে না। বিশ্বে অনেক দেশ-মহাদেশ আছে। বাংলাদেশ সেখানে যাবে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে।
গত জুনে সুইজারল্যান্ড সফরকালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসার সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে ব্রিকস নিয়ে দুই রাষ্ট্র প্রধানের আলোচনা হয়। রামফোসা বাংলাদেশের সদস্যপদের ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিলে ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে আবেদন করে বাংলাদেশ।
ব্রিকসের উন্নয়ন সংস্থা ২০২১ সালে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়। এই ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ৬৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কাজ করছে।
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার রাতে জোহানেসবার্গের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনের সাইডলাইনে বুধবার চীনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সেই রাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনা কুশল বিনিময় করেন।
চীনের গণমাধ্যম সিনহুয়া জানায়, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন তাঁর দেশ বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতাকে সমর্থন করে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে, যাতে বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রেখে উন্নয়ন অর্জন করতে পারে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানায়, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে চীন বাংলাদেশকে সমর্থন করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।
বৃহস্পতিবার ফ্রেন্ডস অব ব্রিকসের সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিকস আউটরিচ অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যে ব্রিকসকে বহু কেন্দ্রিক বিশ্বের লাইটহাউস আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আশা করি আমাদের সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সকলের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্রিকস আত্মপ্রকাশ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “বৈশ্বিক আদর্শ ও মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদেরকে অবশ্যই ‘না’ বলতে হবে। অবরোধ এবং প্রতি-অবরোধের চক্রকে বন্ধ করতে হবে। সকল হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধ শুরুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।”
বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য বৈশ্বিক সম্পদ ব্যবহার না করে তা জনগণের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
হতাশাজনক সিদ্ধান্ত
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমাদ বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যেভাবে বলা হয়েছিল, তাতে মনে হচ্ছিল যে বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্যপদ পাবে। আমরা দেখলাম বাংলাদেশকে সদস্যপদ দেওয়া হলো না। এটি আমার কাছে বিস্ময়কর এবং বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক।”
তিনি বলেন, “ব্রিকসের সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হতে হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। চীনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সদস্যপদ সমর্থন করবেন বলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন এবং তিনি বাংলাদেশে আসছেন। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক ভালো। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কেন সদস্যপদ পেল না সেটি খুঁজে বের করতে হবে।”
রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ বলেন, “যে দেশগুলোকে ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে আহ্বান করা হয়েছে সেই দেশগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সদস্যপদ পেতে কাজ করবে।”
বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়াটা ‘অপ্রত্যাশিত’ মন্তব্য করে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “ব্রিকস জোটে চীনের প্রভাব অনেক বেশি। বাংলাদেশের ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়ায় ভারতসহ পশ্চিমা দেশগুলো অখুশি হবে না।”