‘কোয়াড’ নিয়ে চীনের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ

জেসমিন পাপড়ি
2021.05.11
ঢাকা
‘কোয়াড’ নিয়ে চীনের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ বেইজিং এর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন দিয়াউতাই-এ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র (ডানে) সাথে বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ৫ জুলাই ২০১৯।
[রয়টার্স]

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট কোয়াডে অংশ নিতে বাংলাদেশকে চীনের সতর্ক করার প্রেক্ষিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। 

চীনের এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয় উল্লেখ করে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন–সার্বভৌম দেশ। আমরাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করব।” 

কোয়াড নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত আগ বাড়িয়ে কথা বলছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে অবাধ নৌ চলাচল সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন চার দেশীয় জোট কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা কোয়াডের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ সম্প্রতি বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। বেইজিং একে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী বা জোট হিসেবে বিবেচনা করে। 

এই জোটে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক করে সোমবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, “এ ধরনের ছোট গোষ্ঠী বা ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ভাবনাটা ভালো নয়। বাংলাদেশ এতে যুক্ত হলে তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ করবে।” 

তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, “যেকোনো দেশ তার বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। দেশের মঙ্গলের জন্য আমরা কী কাজ করব না করব, আমাদের মৌলিক অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।”

“আমরা নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলি এবং সেটাই বজায় রাখব,” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

‘কুটনীতিকরা এ ধরনের ভাষায় কথা বলেন না’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত। সাধারণত কুটনীতিকরা এ ধরনের ভাষায় কথা বলেন না।” 

“হতে পারে কোয়াড নিয়ে চীনের দ্বিমত আছে; এই জোটকে চীন তাদের জন্য হুমকি মনে করে। কিন্তু বাংলাদেশ তো কোয়াডের সাথে যুক্ত হয়নি, কিংবা হওয়ার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেনি। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে সরাসরি মন্তব্য করাটা কূটনীতিকসুলভ আচরণ ছিল না,” মনে করেন এই বিশ্লেষক। 

ড. দেলোয়ার বলেন, “কোয়াড নিয়ে এক ধরনের অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে চীনের মধ্যে। তবে বাংলাদেশ থেকে যে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে তাতে কোয়াড ও বাংলাদেশ নিয়ে চীনের যে আশঙ্কা ছিল তা কেটে যাবে।”

“বাংলাদেশ পরিষ্কার করে দিয়েছে, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র সবাই আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র এবং সবাই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে কোনো একটি রাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে সম্পর্কের ক্ষতি করার কোনো সুযোগ নেই,” মনে করেন ড. দেলোয়ার হোসেন। 

চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের সূত্র ধরে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানও পরিষ্কার করেন। 

তিনি বলেন, “চীনের রাষ্ট্রদূত তার দেশের অবস্থানের কথা বলেছেন। যে প্রতিষ্ঠানের কথা উনি (রাষ্ট্রদূত) বলছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের (কোয়াড) কেউই এখনো আমাদের অ্যাপ্রোচ করেনি। এটি একটু আগ বাড়িয়ে বলা হয়েছে।” 

চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে “খুবই দুঃখজনক” আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “চীনের কাছ থেকে আমরা এমন ব্যবহার আশা করিনি।” 

যেভাবে আলোচনায় কোয়াড ও বাংলাদেশ

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন’ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তিতে ২০০৭ সালে কোয়াডের আলোচনা শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। তবে ২০২০ সালে জাপানের টোকিওতে দুদিনব্যাপী বৈঠকের পরে এই জোট নতুন করে আলোচনায় আসে। 

প্রাথমিকভাবে কোয়াড কোনো একটি দেশকে লক্ষ্য করে গঠিত না হলেও গত মার্চে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নেতাদের বৈঠকে “চীনের সম্ভাব্য হুমকি” সম্পর্কে আলোচনা হয় বলে গত এপ্রিলে গণমাধ্যমে জানান যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলভিয়ান। 

গত ২৭ এপ্রিল কয়েক ঘণ্টার সফরে ঢাকা আসেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি। এ সময় তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সাথে পৃথক বৈঠক করেন।

ওই সফরের পর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ–চীন সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। 

রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠকে কোয়াডের বিষয়ে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের সহযোগিতা চান এবং বাংলাদেশেকে ওই জোটে অংশ না নিতে অনুরোধ করেন বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গত ৪ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে আমি উপস্থিত না থাকলেও পরে জানতে পারি, চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী কোয়াডে যোগদানের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্য শুনেছেন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।