বাংলাদেশ আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার কথা বললেও চীনের বক্তব্য নেই

বেনারনিউজ স্টাফ
2024.07.11
ঢাকা
বাংলাদেশ আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার কথা বললেও চীনের বক্তব্য নেই চীনের রাষ্ট্রীয় ভবন গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (বাম থেকে দ্বিতীয়) ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ডান থেকে তৃতীয়)। ১০ জুলাই ২০২৪।
[এপি]

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা চেয়ে এক বিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা প্রথমে জানালেও পরে তা সংশোধন করে এক বিলিয়ন ইউয়ান পাওয়ার কথা জানায়, যা ১৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে আর্থিক সহযোগিতার প্রসঙ্গ বা পরিমাণ উল্লেখ নেই, চীনের পক্ষ থেকেও টাকার অংক পরিষ্কার করা হয়নি।

যৌথ ঘোষণাপত্রে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ না থাকার ব্যাপারে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, “এটি সাধারণত যৌথ ঘোষণাপত্রে আসে না। এটি আলাদা অ্যারেঞ্জমেন্ট হবে দুই দেশের মধ্যে।”

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউয়াং লিন বেনারকে বলেন, "বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি সদর দপ্তর থেকে নিশ্চিতকরণের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।"

বুধবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে ২২টি দলিল ও সমঝোতা স্মারক এবং সাতটি প্রকল্পের ঘোষণাপত্র সই হয়। পাশাপাশি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ইউয়ান সহায়তার ঘোষণা দেন।

এর আগে বুধবার সকালে বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, চীন বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। ওই রাতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থের পরিমাণ সংশোধন করে এক বিলিয়ন ইউয়ান বলে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, “ব্যবসা ও অর্থনৈতিক খাতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে চীনের সাথে আলোচনা চলছে।”

এর আগের সপ্তাহে ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, রিজার্ভ বাড়াতে এবং চীনের কাছ থেকে কেনাকাটার জন্য সহায়তা হিসেবে ৫০০ কোটি (পাঁচ বিলিয়ন) ডলারের সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা চেয়েছে বাংলাদেশ। 

‘বিশাল সমুদ্রে এক বিন্দু জল’

যে অর্থ সহায়তার ঘোষণা এসেছে তা বাংলাদেশের চাওয়ার তুলনায় অত্যন্ত সামান্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তবে আর্থিক সহায়তা না মিললেও অন্যান্য দিকে থেকে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন অনেকে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বেনারকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার এবং এখন অর্থনীতিতে সমস্যার যে আকার, সেখানে এক বিলিয়ন ইউয়ান “বিশাল সমুদ্রে এক বিন্দু জল মাত্র!”

তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের মতে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধু ঋণ বা আর্থিক সহায়তার ওপর গড়ে ওঠে না।

“চীন অর্থ সহায়তা দিলেই যে আমরা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ব না, তেমনটি নয়। আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি, সেটা পার করব। …তাছাড়া চীন একমাত্র উৎস নয়। আরও অনেক উৎস আছে,” বেনারকে বলেন তিনি।

আপাতত আর্থিক সহায়তার ‘বিকল্প কোনো উপায় আছে বলে’ মনে করেন না তৌহিদ হোসেন।

এর আগে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টে শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ২৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এছাড়া সরকারের সঙ্গে প্রায় ২৫-২৭ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলারের মতো অনুদান, ঋণ এবং বেসরকারি খাতে আরও কিছু সমঝোতার আওতায় সব মিলিয়ে ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আসে।

শি জিন পিংয়ের ওই সফর দুই দেশের সম্পর্কের একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।

“সব সময় একই ধরনের প্রাপ্তি হয় না। ওই সময় যেসব প্রজেক্ট ঘোষণা হয়েছিল, সেগুলো ইমপ্লিমেন্টের মধ্যে রয়েছে। এবারের সফরে নতুন চ্যাপ্টার শুরু না হলেও পুরোনো চ্যাপ্টার বন্ধ হয়ে যাবে না,” বলেন শহীদুল হক।

ঘোষণাপত্রে যা আছে

গত ৮ থেকে ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের বিষয়ে বৃহস্পতিবার ২৭ দফা যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে দুই দেশ। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না চীন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ‘এক-চীন’ নীতিতে তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

বিবৃতিতে আর্থিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লেনদেন নিষ্পত্তিতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে নতুন প্রকল্পের মধ্যে সাবওয়ে, মেট্রোরেল ও সড়ক; তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান; হাসপাতাল এবং পানি সম্পদ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বিষয়ে চীনের এন্টারপ্রাইজগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংসহ বিভিন্ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু রেল লিংক, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রাজশাহী পানি শোধনাগারসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।