চীনা ঋণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেবে বাংলাদেশ
2021.11.23
ঢাকা
চীনা সরকারের ঋণে এবার তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
ওই প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ধীরগতি সম্পন্ন ন্যারোব্যান্ড (সংকীর্ণ ব্যান্ড) ইন্টারনেট সেবার পরিবর্তে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় বলে বেনারকে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহেদুর রহমান।
বেনারের কাছে আসা প্রকল্পের বিবরণী অনুযায়ী ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্পের মোট খরচ প্রায় পাঁচ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা (৬৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এর মধ্যে চীনা সরকার ঋণ দেবে প্রায় তিন হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা (৩৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে সরকারি সেবাসমূহকে ই-সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া হবে। এর পাশাপাশি সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশে মূলত সড়ক, রেল, ব্রিজসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে বিনিয়োগ রয়েছে চীন সরকারের, যদিও তথ্য প্রযুক্তি খাতে তারা ঋণ প্রদান করেছে।
মোবাইল ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক আবু সাঈদ খান বেনারকে বলেন, “চীনা সহায়তায় চীনা কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এর কারণ, চীনারা এই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।”
চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকায় সীমিত পরিসরে ফাইভ-জি মোবাইল সেবা চালু করবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
ইন্টারনেট সেবার গতি বৃদ্ধি পাবে
প্রকল্প অনুমোদনের পক্ষে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, “এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চগতি সম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত হবে, প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধি পাবে।”
এতে আরও বলা হয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে “প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা সম্ভব হবে; সরকারি সেবা স্বচ্ছ ও সহজ করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
প্রকল্পের বিবরণী অনুযায়ী, এর আওতায় ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে সারাদেশে মোট এক লাখ নয় হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড-এন্ড-ইউজার সংযোগ স্থাপন করা হবে।
এর ফলে বর্তমানে ধীরগতির ইন্টারনেটের পরিবর্তে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার গতি বৃদ্ধি পাবে।
সারা দেশে ১০ হাজার ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। এই সেন্টার থেকে দেশের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার শিক্ষা দেয়া হবে।
জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামোসহ নেটওয়ার্ক-অপারেশন সেন্টার এবং ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। এর আওতায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে।
তথ্য প্রযুক্তির ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং দূরশিক্ষণ প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো সুবিধা সংবলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টারও স্থাপন করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
ভোটার পরিচয়পত্রের আদলে আরও বেশি পরিসরে তথ্য সংবলিত একটি সার্ভার স্থাপন করা হবে, যেখানে দেশের জনগণের জন্ম, মৃত্যু, বায়োমেট্রিকসহ সব তথ্য থাকবে।
“ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল জগত আরও প্রসারিত হবে,” মঙ্গলবার বেনারকে বলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগান মূলত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া।
এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ডিজিটাল ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা।
বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাত মূলত চীনা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল-এমন মন্তব্য করে জোহা বলেন, “তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি মনে রাখতে হবে আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা যেন চীন অথবা অন্য কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।”
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য সরকারের উচিত হবে প্রয়োজনীয় সুবিধা সম্পন্ন ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা।
ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য ‘ডেটা সিকিউরিটি’ আইন প্রণয়নের কাজ করছি। এটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই আইন পাশ হলে আমাদের ডিজিটাল ও তথ্যের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন করা হবে।”
ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্পটিসহ একনেক সভা মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার আর্থিক সংশ্লেষ ২৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা (৩৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।