বাজার স্থিতিশীল করতে সরকার চাল তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক কমিয়েছে

রিয়াদ হোসেন
2024.02.08
ঢাকা
বাজার স্থিতিশীল করতে সরকার চাল তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক কমিয়েছে ঢাকার মতিঝিল এলাকায় সরকারি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। ১০ নভেম্বর ২০২৩।
[মেহেদী রানা/বেনারনিউজ]

রমজানের আগে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল করতে চাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত আদেশ প্রকাশ করা হয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এই আদেশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।

আদেশ অনুসারে, চাল আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো হয়েছে সবচেয়ে বেশি; তিন চতুর্থাংশ। এছাড়া, ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুরে কম-বেশি এক তৃতীয়াংশ কমানো হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর ফলে এসব পণ্যের দাম কমে আসবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বেনারকে বলেন, “আমদানিতে শুল্ক-কর যেহেতু কমানো হয়েছে, বাজারে অবশ্যই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

তিনি বলেন, “আগামী সপ্তাহে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে বৈঠক করার পর ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক চিনি ও ভোজ্য তেলে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেবো।”

গত জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের পরপরই চালের দাম বাড়তে শুরু করে। কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ার পর সরকার অভিযান শুরু করলে দাম এক-দুই টাকা কমে।

গত ২২ জানুয়ারি অবৈধ মজুতদারদের জেল দেওয়ার মতো কঠোর হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ জানুয়ারির মন্ত্রিসভা বৈঠকে চালসহ চারটি পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর নির্দেশনা দেন তিনি।

পণ্যের দাম কমা নিয়ে সন্দেহ

সরকার শুল্ক কমালেও আমদানিকারক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।

সরকারের ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানি, প্রত্যাশিত হারে কর না কমা, আমদানি পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে কাস্টমস কর্তৃক বেশি দাম ধরে পণ্যের শুল্কায়ন করা মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারণ বলে তাঁরা মত দিয়েছেন।

এছাড়া, এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনেক পরে বাস্তবায়ন করায় রমজানের আগে কিছু পণ্য এই সুবিধা নিতে পারবে না বলেও মনে করেন তারা।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বেনারকে বলেন, “চিনির যে শুল্ক কমানো হয়েছে, তাতে প্রতি কেজি চিনির দাম কমতে পারে ৫০ পয়সা। আর প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম পাঁচ টাকার মতো কমতে পারে।”

একই কথা বলেছেন, চাল আমদানিকারক পাটোয়ারী বিজনেস হাউস প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক শহিদুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি বলেন, “আমাদের চাল আমদানি হয় মূলত ভারত থেকে। সেখানে মোটা চাল (স্বর্ণা) প্রতি টন আমদানি মূল্য পড়বে ৫০০ ডলারের আশে পাশে। এই দামে চাল আমদানি করলে প্রতি কেজি বিক্রি করতে হবে প্রায় ৬০ টাকায়, অথচ বর্তমানে বাজারে এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার নিচে।”

তবে দেশের ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বেনারকে বলেন, “ভোক্তাদের বঞ্চিত করার জন্য প্রতিবারই কর কমানোর পরও ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত সামনে আনেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।”

সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা ও সদিচ্ছার অভাবে কারসাজি হচ্ছে বলেও মত দেন তারা।

খেজুরের দাম না কমার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি বেনারকে বলেন, শুল্ক কমানোর কথা শুনে অনেক ক্রেতাই অপেক্ষা করেছেন দাম কমলে কিনবেন। কিন্তু ডিউটি কমেছে মাত্র ১০ শতাংশ। “এর ফলে দাম কমবে না।”

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “যে দামে খেজুর আমদানি করা হয়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তার চেয়ে দ্বিগুণ দাম ধরে শুল্ক আদায় করে।”

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, “সরকার ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১১০ টাকা, অথচ আমাদের ডলার কিনতে হচ্ছে ১২৪ টাকায়। তাহলে দাম কমানোর সুযোগ কোথায়?”

গত কয়েক মাস ধরে দেশের আমদানিকারকরা একই অভিযোগ করে আসছেন।

9199527b-51e3-48ba-9cc6-f2612bc53f1f.jpg
ঢাকার সদরঘাট বাদামতলী ঘাটে পাইকারি বাজার থেকে রমজান উপলক্ষে খেজুর কিনছেন ক্রেতারা। ২৩ মার্চ ২০২৩। [মেহেদী রানা/বেনারনিউজ]

ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম চড়া

ভরা মৌসুমেও বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। রাজধানীর ইব্রাহীমপুরের বাসিন্দা গৃহিনী আফসানা জাহান বেনারকে বলেন, “দুই দিন আগেও পেঁয়াজ কিনেছিলাম ১০০ টাকা কেজি দরে, আজ (বৃহস্পতিবার) ১১০ টাকা হয়ে গেছে।”

কারওয়ানবাজার ও ইস্কাটন এলাকা ঘুরেও পেঁয়াজের দামের একই চিত্র দেখা গেছে।

খোদ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৭০ শতাংশ। আর আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ শতাংশ বেশি দামে। এসব পণ্যের দাম কমানোর বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।

তদারকি না বাড়লে সুবিধা যাবে ব্যবসায়ীর পকেটে

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “সরকার ট্যাক্স কমানোর পর যদি সরবরাহ বাড়ে, তাহলে ভোক্তারা এর সুফল পাবেন। যদি তা না হয়, তাহলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হবে আর লাভ হবে ব্যবসায়ীদের।”

ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সব সময় একটা অজুহাত থাকেই।

সংগঠনটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “সরকার যদি কঠোর তদারকি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কর ছাড়ের এই সুবিধা ব্যবসায়ীদের পকেটে যাবে, ভোক্তা পাবে না।”

এদিকে কর কমানোর পরও যদি পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে না কমানো হয়, তাহলে সরকার শিথিলতা দেখাবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বেনারকে বলেন, “বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে কেউ ব্যত্যয় ঘটালে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ করা হবে। আগামী সপ্তাহে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর অনিয়ম হলে শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।