বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারিতে ঢুকল বাচ্চুর নাম

আহম্মদ ফয়েজ
2023.06.12
ঢাকা
বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারিতে ঢুকল বাচ্চুর নাম ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সামনে হাঁটছেন কয়েকজন পথচারী। ৩১ জানুয়ারি ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

এক দশকের বেশি সময় ধরে বহুল আলোচিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে অভিযুক্ত করেছে। এত বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা সরকারঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তিকে মোট ৫৯টি মামলার ৫৮টিতে অভিযুক্ত করা হয়।

সোমবার একটি সভায় প্রায় আট বছর আগে দায়ের মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দুদক অনুমোদন করেছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবেন।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীসহ এজাহার ও তদন্তে আসা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করে ভুয়া মর্টগেজ, মর্টগেজের অতিমূল্যায়ন, মর্টগেজ বিহীনভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে দুই হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ ১৪৫ টাকা আত্মসাৎ করেন।

“এই ঘটনায় দুদকের পাঁচ কর্মকর্তা মোট ৫৯টি মামলা করেছেন। ওই কর্মকর্তারাই তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেন এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মামলাগুলোতে আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে,” বলেন মাহবুব।

দুদক জানায়, ৫৯টি মামলার মধ্যে ৫৮টি মামলায় বেসিক ব্যাংকের আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় শুরুতেই বাচ্চুকে সম্পৃক্ত না করায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুর ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেই পার পেয়ে যাচ্ছিলেন এমন অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নানা মহলের।

অভিযোগপত্রে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুকে আসামি করা হলেও পরিচালনা পর্ষদের কারো নাম আসামি হিসেবে আসেনি। এর কারণ হিসেবে দুদক সচিব বলেন, “যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার সবগুলোই তখনকার চেয়ারম্যান বাচ্চু, কোম্পানি সচিব শাহ আলম এবং ব্যবস্থাপক এ কে এম সাজেদুর রহমান ও কাজী ফখরুল ইসলামের স্বাক্ষরে হয়েছে। 

“কোনো ঋণ প্রস্তাবেই বোর্ড সদস্যদের কোনো স্বাক্ষর নেই। বোর্ড সদস্যদের না জানিয়ে এগুলো করা হয়েছে। এমনকি কোনো বোর্ড মিটিং থাকলে তার কার্যপত্র বাচ্চু বোর্ড সদস্যদের হাতে মিটিংয়ের আগের রাতে অথবা সকালে দিতেন। যাতে করে কোনো বোর্ড সদস্যই সেদিকে নজর দিতে না পারেন। যেখানে অন্তত ৭ দিন আগে মিটিংয়ের কার্যপত্র বোর্ড সদস্যদের দেওয়ার নিয়ম রয়েছে,” বলেন মাহবুব।

২০২২ সালের নভেম্বরে বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি তদন্ত শেষ করতে দুদককে তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিল উচ্চ আদালত। এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে বিচারিক আদালতে জমা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয় দুদককে।

সে সময় বেসিক ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এবং মামলাগুলোয় চার্জশিট জমা দিতে না পারায় দুদকের ব্যর্থতায় হতাশা প্রকাশ করে আদালত।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেসিক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্ত প্রতিবেদন আসে দুদকে। তার ভিত্তিতেই ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় ১২০ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। মামলাগুলোয় দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় পরবর্তীতে আরও তিনটি মামলা হয়। এসব মামলার একটিতেও আবদুল হাই বাচ্চুকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়নি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে বাচ্চুকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে বাচ্চু পদত্যাগ করেন।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বেনারের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, “এই মামলায় সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুকে অন্তর্ভুক্ত করা ইতিবাচক। তবে সে সময়কার অন্য কোনো পর্ষদ সদস্যের নাম কেন এলো না তা নিশ্চয়ই বিচারিক প্রক্রিয়ায় খতিয়ে দেখা উচিত হবে।”

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চেয়ে টেলিফোন করা হলে এই প্রতিবেদকের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বাচ্চু।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।