করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ শুরু ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত দেড় হাজারের বেশি
2022.06.24
ঢাকা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধিকে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে যেখানে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল শতকরা এক ভাগের নিচে সেই হার বৃহস্পতিবার প্রায় ১৫ ভাগে পৌঁছেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়।
বুলেটিন অনুযায়ী, শুক্রবার শনাক্তের শতকরা হার শতকরা ১২ ভাগের কিছু বেশি ছিল। কিন্তু করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল বৃহস্পতিবারের চেয়ে বেশি।
বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয়েছিলেন এক হাজার ৩১৯ জন, শুক্রবার তা বেড়ে হয় এক হাজার ৬৮৫।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে যাওয়ার কারণে মানুষ আর স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ছাড়াও, বুস্টার ডোজ টিকা নিতেও মানুষের তেমন আগ্রহ নেই।
বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ. এস. এম. আলমগীর শুক্রবার বেনারকে বলেন, “চতুর্থ দফার এই সংক্রমণ মূলত ঢাকা এবং চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে।”
কারণটি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “ঈদুল আজহার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার একটি সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।”
ড. আলমগীর বলেন, “এ ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে সকল যানবাহনে ভিড় থাকবে। মানুষ তো এখন আর মাস্ক পরে না। সুতরাং, সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আমাদের সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।”
‘সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে যাবে না’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ে প্রবেশ করেছে বলা যায়। কারণ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে যেখানে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল শতকরা এক ভাগ, সেই হার বর্তমানে প্রায় ১৫ ভাগ।”
তিনি বলেন, “তবে আমার ধারণা এবারের সংক্রমণের মাত্রা গত তিন ঢেউয়ের মতো এতো মারাত্মক পর্যায়ে যাবে না। এখন মৃত্যুর হার কম, হাসপাতালে রোগীদের ভিড় জমেনি।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আগে টিকা নেয়া অনেক মানুষের শরীরে এন্টিবডি যেমন শেষ হয়েছে, এর পাশাপাশি টিকা নেয়া অনেক মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে তাঁদের শরীরে কিছু প্রতিরোধ হয়েছে। তাঁরা সেই সুবিধা পাবেন।”
অধ্যাপক নজরুল বলেন, “মহামারির ক্ষেত্রে যা দেখা যায় সেটি হলো, ভাইরাস ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেটি মানুষকে প্রথম দ্বিতীয় পর্যায়ে যতটা ক্ষতি করতে পারে, তেমনটি শেষভাগে আর পারে না।”
তিনি বলেন, “তবে যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগ রয়েছে তাঁদের জন্য এই সংক্রমণ বিপদের কারণ হতে পারে।”
অধ্যাপক নজরুল বলেন, “তৃতীয় ঢেউয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলেও প্রাণহানি আগের দুই ঢেউয়ের মতো হয়নি। সুতরাং, ধরে নেয়া যায় সময়ের সাথে সাথে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে সাধারণ ভাইরাসে রূপান্তরিত হবে।”
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ওই বছরের ১৮ মার্চ এই রোগে প্রথম একজন রোগী মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বিপুল সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই রোগে মারা গেছেন ২৯ হাজারের বেশি মানুষ।
সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস টিকা প্রদান শুরু করে সরকার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও এই ভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা কমার পেছনে টিকা প্রদান একটি বড়ো কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশের শতকরা ৭০ ভাগের বেশি মানুষকে বিনামূল্যে দুই ডোজ টিকা দিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রমের ব্যাপারে ড. এ.এস.এম. আলমগীর বলেন, “ইতোমধ্যে ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই কোটি ৮৯ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ১৮ বছরের ওপরের সব বয়সের মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়া।”