ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্ট, সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা

আহম্মদ ফয়েজ
2023.09.21
ঢাকা
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্ট, সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ। ৩০ আগস্ট ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য এবং তাঁর বিকৃত ছবি আপলোড করার অভিযোগে তিন জনের বিরুদ্ধে সিলেটে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এটিই এই আইনের অধীনে প্রথম মামলা।

মামলাটি সদ্যবাতিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হলেও ইতোমধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ায় এর কার্যক্রম নতুন আইনে পরিচালিত হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী টিপু রঞ্জন দাস।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিতর্কের মুখে জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পরে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে এটি ১৮ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর এর আওতায় আর কোনো মামলা দায়েরের খবর পাওয়া যায়নি।

টিপু রঞ্জন জানান, গত মঙ্গলবার মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ সিলেট শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন।

আদালতের বিচারক মো. মনির কামাল অভিযোগ আমলে নিয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

তবে ঘটনাটির স্থান মোগলা বাজার থানা এলাকায় হওয়ায় তদন্তের জন্য মামলাটি তাঁরা ওই থানায় পাঠিয়ে দেবেন বলে বেনারকে জানান দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দোহা।

এই মামলার আসামিরা হলেন; সিলেটের জৈন্তাপুরের বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ, মৌলভীবাজারের বড়লেখা এলাকার নাজমুল ইসলাম ও সিলেট নগরীর নুরুল ইসলাম ওরফে মাসুদ।

আসামিরা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান শামসুদ্দোহা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্টুন তৈরি করে অবমাননামূলক ক্যাপশন দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকবার আপলোড করেছেন। তারা সরকার, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন এবং জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ও দেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের নামকে বিকৃত করেছেন।

এই আসামিরা কখনো দেশে, কখনো বিদেশে অবস্থান করেন বলে জানান মামলার বাদী মোস্তাফিজুর রহমান।

সাইবার নিরাপত্তা আইন নিবর্তনমূলক: সম্পাদক পরিষদ

সাইবার নিরাপত্তা আইনে অবলুপ্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধিকাংশ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন আগের মতো সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ।

বুধবার এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ মন্তব্য করে, সাইবার নিরাপত্তা আইনও একটি নিবর্তনমূলক আইন।

“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে,” জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা—এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়ে গেছে।”

এদিকে গণতন্ত্রের আবরণে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য নাম পাল্টে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

শনিবার বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইন একই; শুধু নামের পরিবর্তন,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যাতে সরকারের সমালোচনা বা বিরোধিতা করতে না পারে সে উদ্দেশ্যেই এই আইন করা হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ওয়াচলিস্টে বাংলাদেশ

দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক ওয়াচডগ গ্রুপ ‘সিভিকাস মনিটর’ বৃহস্পতিবার তাদের ‘ওয়াচলিস্টে’ বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও এদিন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ইকুয়েডর, সেনেগাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তালিকায়।

সংস্থাটির মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী এবং ভিন্ন মতাদর্শীদের ওপর ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন চালানো হয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতির কারণে ওয়াচলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে এক বিবৃতিতে।

সিভিকাস উদ্বেগ প্রকাশ করে; নির্বাচনের আগে বিরোধীরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বানোয়াট অভিযোগে রাজনৈতিক কর্মী ও সরকারের সমালোচকদের কারারুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রতিবাদ বন্ধে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করছে কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।