বৃষ্টির ভোগান্তি নিয়েই ঈদুল আযহা উদযাপনে প্রস্তুত বাংলাদেশ

আহম্মদ ফয়েজ
2023.06.28
ঢাকা
বৃষ্টির ভোগান্তি নিয়েই ঈদুল আযহা উদযাপনে প্রস্তুত বাংলাদেশ ঢাকার সদরঘাটে স্বজনদের সাথে ঈদ করার জন্য নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ২৭ জুন ২০২৩।
[রয়টার্স]

বাংলাদেশে কোটি কোটি মুসলমান দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা উদযাপন করবেন বৃহস্পতিবার। তবে ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে বৈরী আবহাওয়া।

লাগাতার বৃষ্টি ভোগান্তিময় করে তুলেছে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা। কোরবানির পশুর হাটগুলোতেও ক্রেতা-বিক্রেতার ভোগান্তির শেষ নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে বুধবার ঈদুল আজহার আগের দিন সর্বোচ্চ ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। একইসঙ্গে প্রায় পুরো দেশেই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে দিনভর।

বুধবার ঢাকায় “বছরের সর্বোচ্চ” ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে বেনারকে জানান আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বড়ো বড়ো সড়কগুলোসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে মাইলের পর মাইল যানজট তৈরি হয়।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঈদের দিন ২৯ জুন ঢাকাসহ সারা দেশে এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি কিছুটা কমে যাবে।

ঢাকা ছাড়াও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমিল্লায় ৬২ মিলিমিটার, খুলনায় ৫৬, যশোরে ৫৭ মিলিমিটারসহ সারা দেশে আবহাওয়া অধিদপ্তর কম-বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বলে জানান ওমর ফারুক।

cf4c823b-04bb-4f2b-84cb-228aef3d4cca.jpg
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঈদের আগের দিন তীব্র যানজটে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। ২৮ জুন ২০২৩। [বেনারনিউজ]

ভোগান্তিতে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা

কয়েক দিন ধরেই ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে সড়কগুলোতে। সোমবার থেকে সড়ক পথে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করে। ঢাকা থেকে অন্যান্য অঞ্চলের যাত্রা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক হলেও উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।

সোমবার দিবাগত রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হলে ভোগান্তির তীব্রতা চরম আকার নেয়।

“বৃষ্টির কারণে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কোনো স্থানে পানি জমে যাওয়ায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। ফলে আমাদের নিয়মিত সময়ের তুলনায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বেশি সময় লেগে যাচ্ছে,” বেনারকে বলেন লালমনিরহাটের পরিবহন শ্রমিক আলতাফ মিয়াজি।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন বেসরকারি চাকরিজীবী লুৎফুজ্জামান।

যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বেনারকে বলেন, “রাত ১২টায় বাসে উঠে বুধবার সকাল ৮টায় যমুনা সেতু পার হয়েছি। কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট, সড়কজুড়ে বিশৃঙ্খলা।”

“যেসব পরিবার শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে যাত্রা করেছে, তাদের জন্য ঈদের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে,” বলেন লুৎফুজ্জামান।

000_33LC6WE.jpg
ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেনের জন্য ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ২৮ জুন ২০২৩। [এএফপি]

ট্রেনে ঈদযাত্রার শেষদিন বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে যাত্রীদের অস্বাভাবিক চাপ ছিল। টিকিট সংকট থাকলেও ঘরে ফেরা মানুষের কাছে বৃষ্টিতে দুর্ভোগের বিষয়টি ছিল মুখ্য।

যাত্রীদের নানা অভিযোগ থাকলেও ঈদুল আযহায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বুধবার সকালে সরকারি বাসভবনে তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের মতো ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে।

একইসঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ঈদযাত্রায় যেসব যাত্রী কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এটা পূর্বেই অনুমেয় ছিল। সেই আলোকে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।”

“আমাদের দেশে যাত্রীদের অধিকার আসলে নিয়মিতই লঙ্ঘিত হয়। কিন্তু ঈদের সময় যেহেতু কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ে তাই ভোগান্তিটা চরম মাত্রা ধারণ করে। বিষয়টি নিয়ে কেবলই আলোচনা হয়,” বলেন তিনি।

caa2f67f-fd46-4f3b-9c0b-8c720da14b7e.jpg
ঢাকার কমলাপুর এলাকায় জলাবদ্ধ সড়ক দিয়ে কোরবানির গরু নিয়ে ফিরছে একটি পরিবার। ২৮ জুন ২০২৩। [বেনারনিউজ]

পশুরহাটে চরম ভোগান্তি

বাংলাদেশে ঈদুল আজহার সময় কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, এ বছর দেশে ১ কোটি ২৩ লাখের বেশি কোরবানির পশুর চাহিদা আছে। গত বছর ছিল ১ কোটি ২১ লাখ।

ঢাকাসহ সারা দেশে কোরবানির পশুর হাট বসছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। সাধারণত সরকারি হিসাবের বাইরেও প্রচুর সংখ্যক পশুর হাট বসে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

ঈদের দুই-তিন দিন আগে থেকে পশুর চাহিদা বাড়তে থাকলেও রাজধানীর হাটগুলোতে ক্রেতার সর্বাধিক সমাগম হয় ঈদের আগের দিন। মূলত, পশু কিনে রাখার অসুবিধা বিবেচনা করেই শেষ দিন কোরবানির পশু কিনে থাকেন রাজধানীবাসী।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় আমুলিয়া মডেল টাউনে গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারটি প্রায় ক্রেতাশূন্য। বিক্রেতারাও নিজেদের বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে নানা চেষ্টা করছেন।

কুষ্টিয়া থেকে আটটি গরু নিয়ে সোমবার রাতে ঢাকার এই হাটে আসেন কুমারখালী এলাকার শরীয়ত মোল্লা।

বেনারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “মঙ্গলবার একটি গরু বিক্রি করেছি। বাকিগুলোও দেখেছেন ক্রেতারা, আশা করেছি আজ (বুধবার) সবগুলোই বিক্রি করতে পারব। বৃষ্টির কারণে এখনো হাটে ক্রেতা নেই, তাই কিছুটা আশঙ্কার মধ্যে আছি।”

ঢাকার গাবতলী, আফতাবনগর, হাজারীবাগসহ বড়ো বড়ো গরুর হাটগুলোতে বিকেলের দিকে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পশু কিনতে গেছেন অনেক ক্রেতা।

হাজারীবাগ হাট থেকে কোরবানির পশু কিনেছেন জিগাতলার বাসিন্দা দেলোয়ার মহিন। তিনি বেনারকে বলেন, “দিনভর অপেক্ষা করেছি বৃষ্টি থামার, শেষে বিকেলে গিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই একটি গরু কিনে নিয়ে এসেছি। বাজারের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। বৃষ্টি-কাদা একাকার।”

ঈদের দিন সকালেও বৃষ্টি থাকলে কোরবানি নিয়ে বিড়ম্বনা বাড়বে মানুষের। জলাবদ্ধতার কারণে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় ঢাকায় পরিস্থিতিটা খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজধানীবাসী।

বুধবার পুরান ঢাকা, বংশাল, মিরপুর, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে গেলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ও পশু বর্জ্য অপসরণ করতে তৎপর থাকবেন করপোরেশনের কর্মীরা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।