কোরবানির পশুর বিপুল পরিমাণ বর্জ্য স্বল্প সময়ে অপসারণ, ঢাকাবাসীর স্বস্তি
2023.06.30
ঢাকা
পূর্ব ঘোষিত ২৪ ঘণ্টার আগেই কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তরে ৮ ও দক্ষিণে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের দাবি করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
দ্রুত বর্জ্য অপসারণের জন্য দুই সিটি প্রায় ২০ হাজার কর্মী মাঠে নামিয়েছিল।
ঈদের আগের দিন থেকে টানা বর্ষণের মধ্যেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঢাকা শহরে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করায় তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটির মেয়র। আর বিভিন্ন সেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসীর প্রশংসা পেয়েছে সিটি করপোরেশন।
শুক্রবার ঢাকার ধানমন্ডি, মতিঝিল, পুরানো পল্টন সহ কয়েকটি এলাকার সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কোরবানির পশুর বর্জ্য দেখা যায়নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী শুক্রবার বেনারকে বলেন, “প্রতিবছর ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন কোরবানির বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বৃহস্পতিবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত সব ওয়ার্ডের বর্জ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে।”
“ঢাকা শহরের অনেক অঞ্চলে বিশেষ করে পুরান ঢাকায় তিন দিন ধরে কোরবানি চলে। আজকেও অনেক পশু কোরবানি হয়েছে এবং আমরা আজ রাতের মধ্যে সব বর্জ্য পরিষ্কার করব,” বলেন তিনি।
উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত (ডিএনসিসি) এলাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা প্রধান কমডোর এস. এম. শরিফ-উল ইসলাম।
তিনি জানান, ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলে ঈদের দিন রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। শুক্রবারও কোরবানি হয়েছে। তবে গতকালের চেয়ে বর্জ্যের পরিমাণ বেশ কম, সন্ধ্যার মধ্যে সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
‘এমন চিত্র আগে দেখিনি’
উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের পল্লবী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা হাসানুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “এ বছর অবিশ্বাস্য কাজ করেছে সিটি করপোরেশন। পশু কোরবানির পর মাংস কাটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসে কোরবানির বর্জ্য নিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “পুরো এলাকা একেবারে পরিষ্কার। এমন চিত্র আগে কখনো দেখিনি।”
ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “এবার শহর পরিচ্ছন্ন থাকার কারণ হলো সিটি করপোরেশনের তৎপরতা—সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।”
“এর পাশাপাশি প্রকৃতি এবার আমাদের প্রতি উদার ছিল। ঈদের দিন থেকেই (টানা) ভারী বর্ষণ হয়েছে। সে কারণে কোরবানির পশুর রক্ত ধুয়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে, রক্তগুলো পিচঢালা পথে শুকিয়ে যেত এবং অসহ্য রকমের দুর্গন্ধ হতো।”
মিজানুর রহমান বলেন, “এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে অনেকে ঈদের আগের দিন এমনকি ঈদের দিনও সপরিবারে ঢাকা ত্যাগ করে থাকেন।”
কমেনি চামড়া সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
এবার সিন্ডিকেট ভেঙে কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো করে চামড়া কিনছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি গরুর চামড়ার দাম সর্বনিম্ন ৮০০থেকে ৯০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও সারা দেশে সেই চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। প্রতিটি ছাগল ও ভেড়ার চামড়া মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকায় কিনছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে দেশের কোথাও সরকারি কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দেখা যায়নি।
গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কোরবানিদাতারা।
ঈদের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, কাঁচা চামড়া নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে কেনা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে বাস্তবে তাঁর এই ঘোষণার কোনো প্রভাব দেশের কোথাও দেখা যায়নি।
নওগাঁ শহরের চামড়াপট্টি এলাকায় একটি ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বেনারকে বলেন, “চামড়াটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে দাম দিলো মাত্র ২০ টাকা, যা দিয়ে আমার রিকশা ভাড়াও হবে না। যে দোকানেই যাই, একই দাম; ২০ টাকা। কী আর করব! দিয়ে এলাম। সিন্ডিকেটের হাতে মানুষ জিম্মি।”
দেলোয়ার বলেন, “একটি চামড়ার জুতা কিনতে লাগে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। একটি ছাগলের চামড়া দিয়ে কতগুলো জুতা হয় একবার চিন্তা করে দেখেন!”
চামড়ার ক্রেতা হাকিম (ছদ্মনাম) বেনারকে বলেন, “সরকার ৮০০ টাকা বললেই তো আর সেই দামে কেনা যায় না। আমরা ৩০০ টাকা থেকে সাইজ অনুযায়ী এক হাজার টাকায় চামড়া কিনছি। তবে পচনশীল হওয়ায় আমাদের চামড়া না দিয়ে কোনো উপায় নেই।”
বাংলাদেশে সারা বছরে উৎপাদিত চামড়ার শতকরা ৬০ শতাংশ আসে কোরবানির মৌসুমে।
মৎস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার জানানো হয়, এ বছর ঈদুল আযহায় ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২ টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর দেশে কোরবানিকৃত গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩ টি।
তবে ঈদের প্রথম দিনে সর্বমোট ৩ লক্ষ ২০ হাজার পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। প্রতিবছর এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয় চামড়া রপ্তানি থেকে।
তবে রপ্তানি হওয়া চামড়ার অধিকাংশই আধা-কাঁচা চামড়া। এ ধরনের চামড়ার প্রধান বাজার চীন। চীন এসব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি করে থাকে।