গাইবান্ধার উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত থাকায় শাস্তির মুখে ১৩৩ কর্মকর্তা
2022.12.01
ঢাকা
সংসদীয় আসনের এক উপনির্বাচনে অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে জেলার অতিরিক্ত প্রশাসক ও ওই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইসি গঠিত তদন্ত কমিটি।
ওই দিন নির্বাচন চলাকালে নির্বাচন ভবনের মনিটরিং সেল থেকে সিসিটিভি ফুটেজে এক-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম দেখতে পেয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয় কমিশন।
“আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ করেছি, ভোট গ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে এবং অনেক গোপন কক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশ লক্ষ করেছি,” ভোটের দিন ঢাকায় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন হাবিবুল আউয়াল।
পরবর্তীতে, ওই আসনের নির্বাচনী অনিয়ম জানতে দুই দফায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ ও উপাত্ত নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে বৃহস্পতিবার কথা বলেন সিইসি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন এবং বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারাও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণ হয়।
দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আগামী এক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান সিইসি।
তিনি জানান, দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইসির আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, একজন প্রিজাইডিং অফিসারকে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করার পাশাপাশি পুলিশের পাঁচ উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ১২৫ জন প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।
মূলত ব্যাংকার বা স্কুল কলেজের শিক্ষকরা প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আগামী এক মাসের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা কমিশনকে অবহিত করতে হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, “অন্যথায় কমিশন নিজেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
সিইসি জানান, ১৪৫টি কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করা লোকদের ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে কাজ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান সিইসি।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন আইনে অভিযুক্তদের জেল-জরিমানার মুখে পড়ার বিধান রয়েছে।
তবে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় প্রার্থী, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়নি বলে জানান হাবিবুল আউয়াল।
‘মূল হোতারা অধরা’
নির্বাচনী অনিয়মের জেরে ইসির এই পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “এটি ঠিক যে নির্বাচন কমিশন একটি ইতিহাস তৈরি করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, এই অনিয়মের মূল হোতারা অধরাই থেকে গেলো। অপরাধের নেপথ্য নায়কদের ইসি ধরতে পারেনি বা ছেড়ে দিয়েছে।”
এই ব্যাপক নির্বাচনী অনিয়ম ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া হয়নি’ দাবি করে এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, “অথচ এই ঘটনার নেপথ্যের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং মূল নির্দেশ বা প্রশ্রয়দাতা কর্মকর্তারা অধরা থেকে গেলো।”
এদিকে গাইবান্ধা উপনির্বাচনে পুনঃভোটের তারিখ “আগামী সপ্তাহে জানানো হবে,” বলে জানিয়েছেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল।
তবে এই নির্বাচনে নতুন করে প্রার্থী যোগ হবার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “সব প্রার্থী আগের মতোই থাকবে।”