ইভিএম নয়, ব্যালটেই হবে আগামী সংসদ নির্বাচন
2023.04.03
ঢাকা
আগামী সাধারণ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পুরোটাই হবে ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালট বাকশে।
সোমবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম এই তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাংগীর বলেন, “দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনে ব্যালট পেপার এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাকশের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনী রোডম্যাপে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। এ বিষয়ে আট হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতে অগ্রগতি হয়নি।”
কারণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইসি’র কাছে থাকা মেশিনগুলো (ইভিএম) মেরামতের জন্য যে এক হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল, সেই অর্থ প্রাপ্তি নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।”
তবে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার চলমান থাকবে বলে জানান ইসি সচিব।
ইভিএমের রাজনৈতিক বিতর্ক
অনেক রাজনৈতিক দলও সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব বলেন, “সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয় কমিশনের বিবেচনায় থাকতে পারে।”
নির্বাচন কমিশন আগামী সাধারণ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে প্রচলিত কাগজের ব্যালটের পরিবর্তে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গত বছরের আগস্টে। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও তার মিত্রদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে পড়ে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। কারণ আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহারের দাবি করে আসছিল আওয়ামী লীগ।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণ দেখিয়ে সরকার চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কেনার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “আগামী নির্বাচন ইভিএমে নয়, ব্যালটে করার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে বিএনপি’র কোনো আগ্রহ নেই।”
তিনি বলেন, “বিএনপি’র মূল আগ্রহ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। সেই সরকারই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং তার মাধ্যমে ঠিক হবে কীভাবে নির্বাচন হবে।”
এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। কী পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের আছে।”
তিনি আরও বলেন, “আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইভিএম কেনা আর মেরামতের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে যে বাজেট চাওয়া হয়েছে সেটি এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজকের পরিস্থিতিতে এই এক বিলিয়ন ডলার খরচ করার যৌক্তিকতা আছে কি না সে বিষয় নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।”