জামিনে মুক্ত সাংবাদিক রোজিনা হাসপাতালে

জেসমিন পাপড়ি
2021.05.24
ঢাকা
জামিনে মুক্ত সাংবাদিক রোজিনা হাসপাতালে জামিনে মুক্তি পাবার পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে হাসপাতালে যাবার পথে গাড়িতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। ২৩ মে ২০২১।
[বেনারনিউজ]

বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের আন্দোলনের মধ্যে জামিনে মুক্ত সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয় বলে সোমবার বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু। 

কারাগার থেকে ছাড়া পাবার পর হাসপাতালে রোজিনার করোনাসহ “বেশ কিছু টেস্ট করানো হয়েছে,” বলে বেনারকে জানান মিঠু।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। বাকি সব রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। ডাক্তার জানিয়েছেন, সেগুলো পেলেই তার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হবে।”

তবে রোজিনা খুব বেশি কথা বলতে চাইছেন না বলে জানান মিঠু। তাঁর ওপর যে মানসিক নির্যাতন হয়েছে, এটা তার ফল বলে মনে করেন তিনি। 

“সে (রোজিনা) আসলে ট্রমার মধ্যে আছে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিমর্ষ ছিল সে। ফুল নিয়ে অপেক্ষমাণ সুহৃদদের দেখে সে আবেগাপ্লুত হয়েছিল,” মঙ্গলবার বেনারকে বলেন রোজিনার বোন সাবিনা পারভীন। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার রোজিনা ইসলাম ছয়দিন কারাগারে থাকার পর পর রোববার জামিনে মুক্ত হন। 

মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে রোজিনা বলেন, “আমি অবশ্যই সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব।” 

এ সময় সাংবাদিকসহ যাঁরা তাঁর মুক্তির আন্দোলনে পাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান রোজিনা।

রোববার সকালে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা ও পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে তাঁকে জামিন দেয় আদালত।

গণমাধ্যম অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে মন্তব্য করে রোজিনার জামিন আদেশের সময় বিচারক বলেন, “কোর্ট এবং গণমাধ্যম কখনোই একটি আরেকটির জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে না। কোর্ট সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।” 

“সুতরাং আমরা আশা করব যে, উনি (রোজিনা ইসলাম) ওনার দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন থাকবেন,” যোগ করেন বিচারক। 

জামিনের কাগজপত্র গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানোর পর রোববার বিকেলেই মুক্তি পান রোজিনা।

সেখান থেকে সরাসরি তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়, বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। পরিবারের সদস্য ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করছেন না তিনি। 

রোজিনার ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি

রোজিনা মুক্ত হলেও তাঁর ওপর হওয়া নির্যাতনের বিচার দাবি করেছে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বেনারকে বলেন, “প্রথমদিনেই সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন না হওয়ায় আমাদের মধ্যে যে হতাশা, কষ্ট শুরু হয়েছিল রোববার তিনি জামিন পাওয়ায় তা কিছুটা দূর হয়েছে। তাঁর জামিনে আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি।” 

“তবে আমাদের দাবি, সচিবালয়ের মতো জায়গায় পেশাদার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের উপর যে নির্যাতন হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্ত নয়, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে,” বলেন তিনি। 

সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করার দাবি জানিয়ে প্রেস ক্লাব সভাপতি বলেন, “রাষ্ট্র ও গণমাধ্যম একে অপরের শত্রু নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে গণমাধ্যম সহায়ক হিসেবে কাজ করে।”

“অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়,” জানিয়ে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “রোজিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য চুরির অভিযোগ মামলা করা হয়েছে। …আমি চাই রোজিনা যেন ন্যায় বিচার পান।” 

পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গত গত ১৭ মে সচিবালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে গেলে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরি এবং ছবি তোলার অভিযোগে এক কর্মকর্তার কক্ষে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। 

পরে রাতে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ১৯২৩ সালের এই আইন অনুযায়ী কেউ অভিযুক্ত হলে তাঁর সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। 

গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার আদালত রোজিনাকে কারাগারে পাঠায়। সেদিন রোজিনা জামিন আবেদন করলে সেটার শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করে আদালত। পরে বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে রোববার আদেশের দিন ধার্য করা হয়। 

রোজিনা ইসলাম দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। মঙ্গলবার প্রথম আলো এক বিবৃতিতে জানায়, রোজিনা ইসলাম সাম্প্রতিককালে “স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা” নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন করেছেন। 

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম গ্রেপ্তারের পর থেকেই তাঁর মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ ও আন্দোলনে নামেন সাংবাদিকরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো রোজিনার মুক্তি দাবি করে।

“দেশের সাংবাদিকরাসহ আন্তর্জাতিক মহল যেভাবে রোজিনার পাশে থেকেছেন তা এক অনন্য উদাহরণ। এ জন্য সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ,” বেনারকে বলেন রোজিনার বোন সাবিনা পারভীন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।