তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে ক্ষতি ৫ হাজার কোটি টাকা
2024.09.12
ঢাকা
শ্রমিক অসন্তোষে পোশাক কারখানা ভাঙচুর ও বন্ধ থাকায় আনুমানিক পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)।
অন্যদিকে চলমান অসন্তোষের কারণে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে আইসিসি'র নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর নাসির হোসেন বলেন, “দুষ্কৃতিকারীদের হামলার কারণে এ যাবত প্রায় আনুমানিক ১০০টির অধিক কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ২০০-এর অধিক কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে আনুমানিক ৫ হাজার কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।"
একই অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রমিক, শিল্প মালিক এবং সরকারকে এক টিম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমার একটা আশা, যতদিন থাকি, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ককে একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাব। শ্রমিক, মালিক, সরকার একসঙ্গে টিম হয়ে কাজ করবে। ব্যবসা করা একটা সংগ্রাম, এ সংগ্রামটা আমরা সহজ করব।"
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংকালে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি বলেন, "এই শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে যেমন ষড়যন্ত্র আছে তেমনই তাদের কিছু ন্যায্য দাবিও আছে।”
‘কলখারখানাগুলো চালানো উচিত’
বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ২১৯টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল, যার মধ্যে ১৩৩টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে তৈরি তৈরি পোশাক খাতের বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বিজিএমইএ-র এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সংগঠনের মোট ২ হাজার ১৪৪ টি সদস্য কারখানার মধ্যে বৃহস্পতিবার বন্ধ ছিল ১১৫টি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, শ্রমিকদের দাবিগুলো মানা উচিত।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. আবুল বারকাত বেনারকে বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক যে অবস্থা তাতে সব শিল্প-কলখারখানাগুলো সাধারণভাবে চালানো উচিত এখন।”
তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান উৎস উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে “সব শিল্প-কারখানাগুলো যেন ঠিকঠাক চলে সে বিষয়ে আরও বেশি যত্ন নেয়া দরকার।”
এদিকে বুধবার একটি বড়ো কোম্পানি বেতন দিতে না পারার কারণে সেখানে “অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটেছে” জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে আলোচনা করে ৭৯ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করার পর সেখানকার ৪০ হাজার শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
“আজ সেজন্য শ্রমিক অসন্তোষ কম আছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সমস্যাগুলোর ধরণ বিবেচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
শ্রমিক-মালিকদের বক্তব্য
শ্রমিক নেতারা জানান, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, টিফিন বিল বৃদ্ধি, বেতনসহ, সমানুপাতিক হারে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ করছেন।
তবে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার পরও তারা কাজে যোগ দেননি বলে বেনারের কাছে দাবি করেন বিজিএমইএর পরিচালক ও লায়লা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইমরানুর রহমান।
“বহিরাগতরা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে” দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের এই শিল্পকে বাঁচাতে সবারই বোঝা উচিত যে একত্রে এই শিল্প চালিয়ে যেতে হবে।"
সরকার, প্রশাসন ও বিজিএমইএ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে শ্রমিকদের সকল দাবি মানা হয়নি বলে বেনারের কাছে দাবি করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি জলি তালুকদার।
মালিকরা কারখানায় গিয়ে সরাসরি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেননি জানিয়ে তিনি বলেন, গত সরকারের সঙ্গে যে সব মালিক যুক্ত ছিলেন তারা যদি আন্তরিক হন এবং রাজনৈতিক কারণ বাদ দিয়ে যদি শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন “তাহলে সমাধান হয়ে যাবে এবং এই শিল্পের জন্য ভালো হবে।"
তবে এই মুহূর্তে শ্রমিকদের শতভাগ দাবি “নিশ্চিত করা সম্ভব নয়” বলে বৃহস্পতিবার গাজীপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “শ্রমিকদের অনেক দাবি যৌক্তিক, মালিকেরা চাইলে পূরণ করতে পারেন। তবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো এখনই দ্বিগুণ করার দাবি বাস্তবসম্মত কিনা সেটি দেখতে হবে।”