হিজাব না পরায় ছাত্রীদের চুল কেটে শিক্ষক বরখাস্ত
2024.02.29
ঢাকা
হিজাব না পরায় ছাত্রীদের চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জের নারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে নারীরা হিজাব না পরলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো শাস্তির বিধান না থাকলেও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর আব্দুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক রুনিয়া সরকার বুধবার সপ্তম শ্রেণির ৯ ছাত্রীর চুল কেটে দেন।
“ঘটনার সত্যতা পাওয়ায়” বৃহস্পতিবার শিক্ষক রুনিয়া সরকারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া
“আমার একটাই হিজাব। ওই হিজাবটা ময়লা হয়ে গেছে, তাই ধুয়ে দিয়েছি। এ জন্য পরে যেতে পারিনি। ম্যাডামকে অনেক অনুরোধ করার পরও আমি রক্ষা পাইনি। ম্যাডাম কোনো কথা না শুনে আমার চুল কেটে দিলো,” সাংবাদিকদের জানায় ওই ঘটনার ভুক্তভোগী এক ছাত্রী মাইসা আক্তার।
এ ধরনের ঘটনা যেন আর কারো সাথে না ঘটে এমন প্রত্যাশা করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় মাইসা।
“গতকাল যখন মেয়ের চেহারা দেখেছি, খুবই কষ্ট লেগেছে,” বেনারকে বলেন ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. কোহিনুর।
তবে “স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ওই শিক্ষিকা ভুল স্বীকার করেছেন” জানিয়ে তিনি বলেন, “কষ্ট থাকলেও আমরা মেনে নিয়েছি।”
ছাত্রীদের চুল কেটে দেবার ঘটনার পর সব অভিভাবক, স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং ওই শিক্ষককে “সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান সিরাজদিখানের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাব্বির আহমেদ।
তিনি বলেন, “উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাব।”
ছাত্রীদের চুল কাটা ‘অপরাধ’
ইসলাম ধর্মীয় বিধানমতে নারীর “শরীর ঢেকে পোশাক পরা আবশ্যক” হলেও ধর্মীয় এই বিধান কেউ যদি না মানেন তাহলে তাঁকে “শারীরিক বা সামাজিকভাবে অপমান করা যায় না,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন রাজধানীর আজিমপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি লুৎফর রহমান।
“এইভাবে চাপ দিয়ে ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে বাধ্য করাও ধর্ম সমর্থন করে না,” জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষিকা হিসেবে তিনি ধর্মীয় বিধি-বিধান শিক্ষার্থীদের শোনাতে পারেন কিন্তু চুল কেটে দিতে পারেন না।”
এদিকে ছাত্রীদের চুল কেটে দেওয়াকে “জঘন্য কাজ” আখ্যা দিয়ে মুন্সীগঞ্জের ওই এলাকার সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “এ ব্যাপারে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।”
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাকে হিজাব যুক্ত করা দেশের “সংবিধান ও আইনবিরোধী” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন নারী অধিকার কর্মী খুশী কবির।
তিনি বলেন, “আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্মে হিজাব ছিল না। এখন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিফর্মে হিজাব যুক্ত করেছে। এটা একেবারে সংবিধান বিরোধী, আইনবিরোধী।”
“ধর্মে এগুলো লেখা নেই। এগুলো চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
“শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়া একটা অপরাধ। একজন শিক্ষক কোনোভাবেই এটা পারেন না। ধর্মের নামে এটাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই,” বলেন খুশি কবীর।
বর্তমানে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন সৈয়দপুর আব্দুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিয়া ফরিদ আহমেদ।
তিনি বলেন, “প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ভুল স্বীকার করেছেন।”