কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হত্যা: সাত দিনেও দায়ী কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ
2022.07.14
ঢাকা

কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের (৩১) লাশ উদ্ধার হওয়ার সাত দিন পার হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা।
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। এসময় জেলার পুলিশ প্রধানকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়া এডিটরস ফোরামের সভাপতি মুজিবুল শেখ সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত “হত্যার কারণ বা এর সঙ্গে কারা জড়িত, সে ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি।”
দ্রুত সাংবাদিক রুবেলের হত্যাকারীদের খুঁজে আইনের আওতায় না আনা হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান রুবেল গত ৩ জুলাই রাতে নিখোঁজ হন। এরপর ৭ জুলাই গড়াই নদী থেকে তাঁর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৮ জুলাই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান। তবে এখন পর্যন্ত এ হত্যায় জড়িত কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এদিকে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে রুবেলের নিখোঁজ হওয়া ও হত্যার পেছনে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে বুধবার এক বিবৃতি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট।
“আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। এখনও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ মামলার দিনই পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল আসামি শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের বিষয়ে ৮০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে,” বেনারকে বলেন মামলার বাদী মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “বুঝতে পারছি না কেন পুলিশ কিছুই করতে পারছে না, নাকি সব জেনেও পুলিশ কিছু করছে না। এখন পুরো পরিবার মিলে বিপদে পড়ে যায় কিনা সেই আশংকায় আছি।”
তবে এখন পর্যন্ত রুবেলের কোনো পরিবার সদস্য কোনো হুমকি পাননি বলে জানান রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান।
এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান জানান, রুবেলের মরদেহের শরীরে কোনো দাগ পাওয়া যায়নি। তবে গলার পেছন দিকে দড়িতে ফাঁস লাগানোর মতো চিহ্ন দেখা যায়।
ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
রুবেলের হত্যাকারীদের খুঁজতে “কয়েকটি টিম” গুরুত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বেনারকে বলেন, “আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”
‘পুলিশি তৎপরতার শিথিলতা সন্দেহ তৈরি করতে পারে’
মানবাধিকার কর্মী নূর খানের মতে, দেশে “বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের কারণে” বিগত দিনেও দেশে “সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
রুবেলের ঘটনাটিও তেমন একটি ঘটনা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ এখন পর্যন্ত ঘাতকদের আটক করতে পারেনি, যা দুঃখজনক।”
“সংবাদ কর্মীদের ওপর আক্রমণের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। অবহেলাজনিত কারণে যদি হত্যারহস্য উদঘাটন না হয়, বা বিলম্ব হয়, তাহলে সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করা যাবে না। ফলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে,” যোগ করেন নূর খান।
তাঁর মতে, শক্তিধর গ্রুপ ছাড়া এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না। সেটা রাজনৈতিক, পেশীশক্তি বা টাকার শক্তি থাকা গোষ্ঠী হতে পারে। এমন আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
পুলিশি তৎপরতার শিথিলতা মানুষের মনে অনেক ধরনের সন্দেহ তৈরি করতে পারে, যা এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দুর্বলতা প্রকাশ করবে,” বলেন নূর খান।
গত ৩ জুলাই রাত নয়টার দিকে মোবাইল ফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয় হবার পর থেকেই রুবেল নিখোঁজ ছিলেন বলে বেনারকে জানান নিহতের চাচা মিজানুর।
রুবেল নিখোঁজ হবার পর তাঁর পরিবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করে বলেও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তিনজন গণমাধ্যমকর্মী খুন হয়েছেন।
সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল ১৯ চলতি বছর রুবেলসহ বাংলাদেশে মোট চার জন সংবাদকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন স্থানীয় দৈনিক কুমিল্লার ডাকের প্রতিবেদক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম (১৯)।
৬ জুন দিবাগত রাত ২টায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পুকুর থেকে আবু জাফর প্রদীপ (৩৫) নামে এক সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ৮ জুন ২০২২ তারিখে রাজধানীর হাতিরঝিলের পাড় থেকে বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন ডিবিসি নিউজের সিনিয়র প্রযোজনা নির্বাহী আবদুল বারীর (২৭) ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।