গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি বিএনপির
2023.08.18
ঢাকা
বিরোধী দলের প্রধান খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ দাবি করে সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ পাঠানোর দাবি তুলেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়।
তবে সরকারের মতে, যে দুটি শর্তে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে জেলের বাইরে রাখা হয়েছে তাতে তাঁর বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সর্বশেষ শুক্রবার দেশজুড়ে গণমিছিল করেছে বিএনপি এবং শনিবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলেছে, তাঁর “বর্তমান শারীরিক অবস্থায় চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে দেশে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো আর কিছু বাকি নেই।”
মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ড্যাব।
বিএনপির এই দাবি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া না হলেও সর্বশেষ গত মার্চে খালেদার সাজা ষষ্ঠবারের মতো ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে জেলের বাইরে রাখা হয়েছে সে অনুসারে তাঁর বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের প্রজ্ঞাপনে যে দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং এই সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’
গত ৯ অগাস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে ওই হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
“খালেদা জিয়ার জীবন বাঁচাতে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে অ্যাডভান্সড সেন্টারে নেওয়া খুবই জরুরি,” জানিয়ে তিনি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে যত দ্রুত সম্ভব বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার মেডিকেল টিম জানিয়েছে, তাঁর বয়স এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় যে ধরনের চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন “তা দেশে সম্ভব নয়।”
“খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন নানা রোগে আক্রান্ত। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন,” বলেও জানান তিনি।
চার বছর খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা হয়নি দাবি করে জাহিদ হোসেন বলেন, “খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় অনেক নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
হার্ট, লিভার, কিডনি ও চোখের সমস্যা ছাড়াও পুরোনো আরথ্রাইটিস এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও কোভিড পরবর্তী জটিলতার কারণে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন “খুবই ঝুঁকিপূর্ণ,” বলেও জানান তিনি।
গত বছরের জুন মাসে এভারকেয়ার হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর খালেদা জিয়ার হার্টে বেশ কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ে।
চিকিৎসক জাহিদ জানান, ব্লকগুলোর মধ্যে একটি ছিল ৯৫ শতাংশ, সেটিতে রিং পরানো হয়।
মুক্তির দাবিতে চার দিনের কর্মসূচি
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত মঙ্গলবার চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
ওই কর্মসূচির আলোকে শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে গণমিছিল করেছে বিএনপি ও বর্তমান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা।
ঢাকায় গণমিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি করেছেন।
“অনতিবিলম্বে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিন, তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন নইলে পালাবার পথ পাবেন না,” বলেন ফখরুল।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি মামলায় তাঁর ১৭ বছরের জেল হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। একই বছর জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় সাজা হয় তাঁর।
২০২০ সালে দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দু’টি শর্তে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়।
এরপর প্রতি ছয় মাস অন্তর খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করছে সরকার। সর্বশেষ এ বছর মার্চ মাসে তাঁর সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি বিষয়ে বিএনপির দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়া একজন দণ্ডিত আসামি। তিনি সরকারের মানবিক বিবেচনায় জেলের বাইরে আছেন। এই অবস্থায় তিনি নির্ধারিত শর্তের বাইরে যেতে পারেন না।”
নির্ধারিত শর্তের কারণেই এই মুহূর্তে বিএনপির দাবি যৌক্তিক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার মতো কোনো অবস্থা এখন নেই।”