খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসছেন তিন মার্কিন চিকিৎসক
2023.10.24
ঢাকা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে আপত্তি থাকলেও তাঁর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তিন চিকিৎসককে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়েছে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে একজন ইতোমধ্যেই ঢাকায় পৌঁছেছেন এবং বাকি দুইজন দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছে বিএনপির মিডিয়া সেল।
খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অনুমতি দিয়েছে বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “ম্যাডামের স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে সরকার যেহেতু তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছে না, তাই মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একজন হেপাটোলজিস্ট, একজন ইন্টারভেনশনিস্ট ও একজন নেফ্রোলজিস্ট বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে মঙ্গলবার সকালে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতায় গত ৯ আগস্ট থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মেডিকেল বোর্ড খালেদাকে অবিলম্বে বিদেশে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানোর সুপারিশ করেছে। কারণ বাংলাদেশে এখন তার জন্য কোনো বিকল্প নেই।
বোর্ড আরও বলেছে ৭৮ বছর বয়সী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন কারণ তার পেট এবং বুকে পানি জমা বেড়েছে, ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছে এবং লিভার সিরোসিস সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে, সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।
খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসায় থাকবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না; এই শর্তে সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। প্রতিবার ছয় মাস করে বাড়িয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অষ্টমবারের মতো খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
বিদেশি চিকিৎসকে আপত্তি নেই সরকারের
বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানো বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, “খালেদা জিয়ার ঢাকার চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বিদেশি চিকিৎসক আনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
বিদেশ থেকে খালেদা জিয়ার পরিবারের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক আনার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আমেরিকার যে তিনজন বিশেষজ্ঞ আসছেন, তারা বিএনপির খরচে আসছেন।
খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই খারাপ: ফখরুল
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই খারাপ।
“খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, এটা আমরা বারবার বলছি,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সকালে ম্যাডামের চিকিৎসকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁর অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক।”
প্রায় তিন মাস ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বেনারকে বলেন, জেলে থাকা অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার ফলে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটে এবং তিনি নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হন।
“দেশে তাঁর চিকিৎসা সম্ভব নয়। অনতিবিলম্বে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। বাংলাদেশে সকল চিকিৎসা দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, প্রাণ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
“আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করেছি। এখন আমাদের কিছু করার নেই। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার,” ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার।