ইতালি যাবার পথে বাংলাদেশিসহ উদ্ধার ২৮০, তীব্র ঠাণ্ডায় মারা গেছেন সাত জন

জেসমিন পাপড়ি
2022.01.25
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
ইতালি যাবার পথে বাংলাদেশিসহ উদ্ধার ২৮০, তীব্র ঠাণ্ডায় মারা গেছেন সাত জন উদ্ধারের আগ মুহূর্তে ইতালির দ্বীপ ল্যাম্পেদুসার উপকূলে বাংলাদেশিসহ প্রায় তিনশ’ অভিবাসী পূর্ণ নৌকা। ২৪ জানুয়ারি ২০২২।
[এপি]

লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালির যাওয়ার পথে বাংলাদেশিসহ ২৮০ জনকে একটি নৌকা থেকে মঙ্গলবার উদ্ধার করেছে ইতালির কোস্টগার্ড। এদের সাথে থাকা আরো সাতজন হাইপারথার্মিয়া বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় জমে মারা গেছেন।

নিহতরা সবাই বাংলাদেশি বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানালেও নিহতদের জাতীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।

ইতালির সিসিলির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল অ্যাগ্রিজেনটোর প্রসিকিউটর লুইগি প্যাট্রোনাজ্জিও-র বরাতে রয়টার্স জানায়, নৌকাটি থেকে উদ্ধার করা  ২৮০ জন অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে ইতালি যাচ্ছিলেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বীপ ল্যাম্পেদুসায় আশ্রয় নিতে চেয়েছিল অভিবাসন প্রত্যাশী দলটি।

উপকূল থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় তীব্র ঠাণ্ডায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।

নিহত সবাই বাংলাদেশি কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান বেনারকে বলেন, “বিষয়টি আমরাও মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। এখনো নিহত বা উদ্ধার বাংলাদেশিদের সংখ্যা নিশ্চিত হতে পারিনি। এই সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।”

“সঠিক সংখ্যা এবং বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য আমরা ইতালি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি,” যোগ করেন তিনি।

“ঘটনাস্থল ল্যাম্পেদুসা একটি দ্বীপ। সেটি সিসিলিস থেকেও অনেক দূরে। সিসিলিসে আমাদের দুইজন অনারারি কনস্যুলার আছেন। তাঁদের মাধ্যমেও আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি,” বেনার বলেন

দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম কল্যাণ) মো. আরফানুল হক।

নিহত এবং উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশি থাকলে মরদেহ দেশে ফেরত পাঠানোসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

দুই-তিন দিন আগে রওনা দিয়েছিল নৌকাটি

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালির কোস্টগার্ড সদস্যরা ল্যাম্পেদুসার কাছের একটি জনবসতিহীন দ্বীপ ল্যাম্পিওনের উপকূল থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে একটি নৌকায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভাসতে দেখেন। এরপর তাদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

প্রসিকিউটর লুইগি জানান, অবৈধ অভিবাসন ও মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

জানা যায়, অভিবাসীদের বহনকারী নৌকাটি দুই থেকে তিন দিন আগে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল।

এপির খবরে বলা হয়, উদ্ধারের সময় কোস্টগার্ড সদস্যরা তিনজনের মরদেহ দেখতে পান। এরপর ল্যাম্পেদুসাতে নিয়ে যাওয়ার সময় আরও চারজন মারা যান। নৌকাটিতে থাকা অভিবাসীদের বেশিরভাগই মিশর ও বাংলাদেশের।

ইতালীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০ মিটার (৬৫ ফুট) দৈর্ঘ্য নৌকাটি থেকে যখন প্রথম সাহায্য চাওয়া হয় তখন এটি তিউনিসিয়ার জলসীমায় ছিল। কিন্তু তারা (কোস্টগার্ড) নৌকাটিকে শনাক্ত করতে পারেনি। পরে এটি ইতালীয় সীমানায় পাওয়া যায়।

ইতালি, কয়েক হাজার আশ্রয়প্রার্থী এবং অন্যান্য অভিবাসীদের জন্য ইউরোপে যাওয়ার একটি প্রধান রুট, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অভিবাসী নৌকাগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রধান গন্তব্য ইতালি। সরকারি তথ্যের বরাতে রয়টার্স জানায়, চলতি বছরের প্রথম ২৪ দিনেই ইতালির কয়েকটি বন্দরে ১ হাজার ৭৫১ জন অভিবাসন প্রত্যাশী আশ্রয় নিয়েছেন।

গত দুই শীতের তুলনায় এবার ইতালিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অভিবাসী প্রবেশ করেছে। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২ হাজার ৫১ জন অভিবাসী প্রবেশ করেছে। গত বছর একই সময়ে ৮৭২ জন এবং তার আগের বছর ৮৩৫ জন ইউরোপের এই দেশটিতে প্রবেশ করে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে অভিবাসীদের প্রবেশ সর্বোচ্চ হয়।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) ২০২১ সালে ভূমধ্যসাগরের এই রুটকে মারাত্মক ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে কমপক্ষে ১ হাজার ৩১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এসব মৃতদেহ প্রায়শই উদ্ধার করা হয় না এবং মৃত্যুর সংখ্যা জীবিতদের সংখ্যা থেকে অনুমান করা হয়। ধারণা করা হয় ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে ২৩ হাজার ৩৮৩ জনেরও বেশি অভিবাসী নিখোঁজ হয়েছেন এবং মারা গেছেন; যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মধ্য ভূমধ্যসাগরে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।