রোহিঙ্গা শিবিরে অভিযানে দুই জঙ্গি নেতা গ্রেপ্তার
2023.01.23
ঢাকা
সম্প্রতি বাংলাদেশে আলোচিত নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শীর্ষস্থানীয় দুই নেতাকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এরা হলেন, সংগঠনটির শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীর এবং ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বা বোমা বিশেষজ্ঞ মো. আবুল বাশার মৃধা।
নবগঠিত জঙ্গি সংগঠনটির এই দুই নেতাকে গ্রেপ্তার বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের আলোকে সোমবার ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭ এর ‘এ’ ব্লকে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২, ৩ এবং ১৫ এর সদস্যরা সমন্বিত চিরুনি অভিযান শুরু করে।
“ব্লকটি ঘেরাও এর সময় সামরিক শাখার প্রধান রণবীর এবং বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার পালানোর চেষ্টাকালে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন,” বলেন মঈন।
তিনি জানান, এই অভিযানে র্যাব একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, পিস্তলের ১০ রাউন্ড গুলি, একটি ব্ল্যাংক কার্টিজ, দুটি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, একটি খালি খোসা, ১০০ রাউন্ড দশমিক ২২ বোরের গুলি, একটি মোবাইল সেট এবং নগদ আড়াই লাখ টাকার বেশি দেশীয় মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
মঈন জানান, গত বছরের ২০ অক্টোবর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তর, গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৭ এর বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে সমতল থেকে পাহাড়ে আত্মগোপনে থাকা আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সামরিক শাখার উপপ্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিকসহ সাত সন্দেহভাজন জঙ্গি এবং তাদের সহায়তাকারী তিন জন পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের একদিন পর ওই আসামিদের বিরুদ্ধে বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করে র্যাব।
র্যাব জানায়, রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে সৈয়দ মারুফ রণবীরের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পায় বাহিনীটি।
ওই তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে র্যাব অভিযান চালিয়েছে জানিয়ে মঈন বলেন, অভিযানের ধারাবাহিকতায় র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান রণবীর ও বাশার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
সেখানে অবস্থান চালিয়েই গ্রেপ্তার করা হয় এই দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি নেতাকে।
র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র্যাব কর্তৃক প্রকাশিত পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জনের তালিকায় গ্রেপ্তারকৃত বাশারের নাম রয়েছে।
মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ বাশার জানিয়েছেন, গত ৩ অক্টোবর র্যাব এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরুর পরে বাশারসহ ৫৫ জন দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থেকে পালিয়ে সিলেট যান এবং সামরিক শাখার প্রধান রণবীরের কাছে আশ্রয় নেন।
“তারা দুই জন বেশ কিছু দিন আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করেন,” বলেন মঈন।
আতঙ্ক বাড়াবে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কোনো বাহিনীর অভিযানে এ রকম সন্দেহভাজন জঙ্গি গ্রেপ্তারের ঘটনা এটিই প্রথম দাবি করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বেনারকে বলেন, “জঙ্গিরা খারাপ লোক, তারা রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়াটা আমাদের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করল।”
তিনি বলেন, “যেহেতু ক্যাম্প থেকে দুই জন বড়ো নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, এখনো আরও জঙ্গি লুকিয়ে আছে কি না তা আমরা বলতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত।”
সম্প্রতি কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেশ কয়েকজন কিশোর বাড়ি ছেড়ে কথিত হিজরত গমনের পর আলোচনায় আসে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নাম।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুরনো কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতারা মিলে গড়ে তোলেন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া।
টাকার বিনিময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন পাহাড়ি এলাকায় কেএনএফ নতুন জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে যৌথ অভিযান চালিয়ে কয়েক ডজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী।