জঙ্গি হামলার হুমকি: বই মেলায় নিরাপত্তা জোরদার
2023.02.24
ঢাকা
জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের হামলার হুমকির পর শুক্রবার থেকে অমর একুশে বইমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। বাতিল করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নির্ধারিত পুস্তক উন্মোচন অনুষ্ঠানও।
২০১৫ সালে বইমেলায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পর একুশে বইমেলায় জঙ্গি হামলা অথবা হামলার হুমকির ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন করে জঙ্গি হামলার হুমকিতে সরকার চিন্তিত না হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
জঙ্গিগোষ্ঠী “মাঝেমধ্যে হুমকি দেয়,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা এসবে ভয় পাই না।”
“তারপরও আমরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নেইনি। বইমেলা এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
জঙ্গি হামলার হুমকি সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলমান একুশে বইমেলায় দর্শক-ক্রেতার ঘাটতি ছিল না। শুক্রবার ছুটির দিনে হাজার হাজার মানুষ বইমেলায় গিয়েছেন।
বাড়তি নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে বেশিরভাগ মানুষ পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাকে খারাপ চোখে দেখছেন না।
বইমেলায় বাড়তি নিরাপত্তা
একুশে বইমেলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম শুক্রবার বেনারকে বলেন, “গতকাল আমরা জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের একটি চিঠি পেয়েছি। ডাক মাধ্যমে পাওয়া চিঠিটির কোনো সঙ্গতি নেই। চিঠির এক জায়গায় বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ীর হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেউ কিছু বলছে না। এ রকম কাজ চলতে থাকলে, করাচির মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে।”
তিনি বলে, “আবার এর সাথে বইমেলাকে যুক্ত করে বলা হচ্ছে, বই মেলাতেও হামলা করা হবে।”
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “গতকালই আমরা চিঠিটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে শাহবাগ থানায় একটি ডায়েরি করেছি। পুলিশ জানিয়েছে, এখন তারা ব্যাপারটি দেখবে।”
একুশে বইমেলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব বলেন, “আজ সকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমি কোনো সমস্যা দেখি না।”
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বই উন্মোচনের যে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে।
তবে জঙ্গি হামলার হুমকির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি লক্ষ করা যায়নি বলে মনে করেন আল-হামরা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী খান মো. মুরসালিন। তিনি শুক্রবার বেনারকে বলেন, “পুরো মেলায় অনেক মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা প্রকাশকরা ও এসব নিয়ে ভয় করি না।”
“আজকে শুক্রবার ছুটির দিন। মেলায় বেশ ভিড়। সত্য কথা বলতে কি, প্রচুর মানুষ মেলায় এসেছেন,” বলেন মুরসালিন।
শুক্রবার বইমেলায় ঘুরেছেন মো. সালাহউদ্দিন। তিনি বেনারকে বলেন, “জঙ্গি হামলার জন্য কি আমরা ঘরে বসে থাকব? ওরা কিছু করতে পারবে না। কারণ, পুলিশ তৎপর বলে মনে হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা বাড়াবাড়ি আছে। তবে নিরাপত্তা তো দরকার।”
তিনি বলেন, “আমরা ভয় পেয়ে গেলে ওরা (জঙ্গি) তো সফল হয়ে গেল। সেটি হবে না। মানুষ এগুলো ভয় পায় না। তাছাড়া, দেশের মানুষের মধ্যে এদের কোনো সমর্থন নেই।”
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বাংলাদেশিদের স্মরণ করে প্রতিবছর বাংলা একাডেমির আয়োজনে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে মাসজুড়ে চলে অমর একুশে বইমেলা।
এই বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের একটি অন্যতম আয়োজন। প্রতিবছর বইমেলাকে সামনে রেখে হাজার হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। অনেক লেখক বইমেলাকে টার্গেট করে বই প্রকাশ করে থাকেন।
বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের সাথে জড়িতরা একুশে বইমেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। কারণ তাঁদের ব্যবসার একটি বড়ো লাভ আসে এই বইমেলা থেকে।
সেই মেলায় আক্রমণের হুমকি বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
‘জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ শুক্রবার বেনারকে বলেন, “২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান ক্যাফে হামলার পর থেকে জঙ্গি গোষ্ঠীদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে পড়েছে।”
“তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। এই জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা মূলত আনসার আল ইসলামের সদস্য যারা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে,” বলেন তিনি।
মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ বলেন, “আনসার আল ইসলাম বইমেলায় হামলার হুমকি দিয়েছে তাদের অস্তিত্বকে জানান দিতে। তারা জানে বইমেলায় হুমকি দিলে চারিদিকে হইচই পড়ে যাবে। তারা যে শেষ হয়ে যায়নি সেটি প্রমাণ করতে পারবে।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো গোষ্ঠী নতুন করে জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেছে কি না-- এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রশীদ বলেন, “জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো নির্বাচনের সময় অনেকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে এই সকল জঙ্গিদের ব্যবহার করে থাকে। এবং এটি খুব মারাত্মক হতে পারে।”