ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দিরে হামলা: পাঁচ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
2023.02.09
ঢাকা
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় সম্পৃক্তদের খুঁজে বের করে বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এই দাবি জানায়। হিন্দু মহাজোটের একাংশের নেতারা দোষীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবিতে শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা, পারিয়া ও চারোল ইউনিয়নের ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় জাতীয় হিন্দু মহাজোট গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
“ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলোর মধ্যে ধনতলা ইউনিয়নের উত্তর সিন্দুর পিণ্ডি হরিবাসর মন্দির, টাকাহারা পাকা সড়কের পাশে কালী মন্দির, হরি মন্দির, মনসা মন্দির, মালীপাড়া শ্মশান কালী মন্দির, নাথপাড়া সার্বজনীন কালী মন্দির অন্যতম। এছাড়া পারিয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার তিনটি ও চারোল ইউনিয়নের নাথপাড়ায় একটি মন্দির রয়েছে,” বলেন তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাটিকে স্থানীয় বাসিন্দারা “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ” বলে চিহ্নিত করেছেন জানিয়ে গোবিন্দ বলেন, “বালিয়াডাঙ্গী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা হিন্দু এবং জনপ্রতিনিধিরাও হিন্দু সম্প্রদায়ের। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় হিন্দু-মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছে।”
এর আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের ফসল নয় বরং একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।”
ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলো মেরামতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ, জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
এই হামলার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বেনারকে বলেন, “প্রায় প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনেই দেখা গেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। সে বিবেচনায় বলা যায়, এটির ক্ষেত্রেও এমনটি থাকতে পারে।”
“সামনে জাতীয় নির্বাচন। এমন সময় এই ধরনের হামলার সঙ্গে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা ধারণা করা মোটেও অমূলক নয়। পুলিশের উচিত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি বের করা। অন্যথায় এই ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে,” বলেন কুদ্দুছ।
তিনি আরও বলেন, “এসব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল দেশকে বিদেশিদের কাছে অস্থিতিশীল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। তাই সামনের দিনগুলোতে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
‘তদন্তের অগ্রগতি সন্তোষজনক না’
মন্দিরে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হলেও গত পাঁচ দিনে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
যোগাযোগ করা হলে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম বেনারকে বলেন, “এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
“কারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে সে বিষয়টি আমরা জানার জন্য জোর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার রাত (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। দু’একজনকে গ্রেপ্তার করা গেলে তদন্ত কাজ সহজ হয়ে যাবে,” বলেন তিনি।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে না হওয়ায় এবং কিছু কিছু মন্দির পরিত্যক্ত জায়গায় থাকায় খুব ভালো নজরদারির মধ্যে ছিল না বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
শনিবারের ঘটনার পরে ইতোমধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী শক্তি বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল ঠাকুরগাঁও সফর করেছে। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানানো হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও।