জমি নিয়ে বিরোধ: ঢাকায় ইসকন মন্দিরে হামলা

পুলক ঘটক
2022.03.18
ঢাকা
জমি নিয়ে বিরোধ: ঢাকায় ইসকন মন্দিরে হামলা ঢাকার ওয়ারীতে রাধাকান্ত ইসকন মন্দিরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ভেঙে ফেলা মন্দিরের সীমানা প্রাচীর। ১৭ মার্চ ২০২২।
[বেনারনিউজ]

পুরান ঢাকায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের রাধাকান্ত জিউ মন্দির সংলগ্ন দেয়ালে হামলার ১৭ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যায় মামলা নিয়েছে ওয়ারী থানা পুলিশ।

হামলার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এবং হামলার সময় ‘ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দুস’ নামে একটি সংগঠন তা টুইটারে শেয়ার করে সহায়তার আবেদন জানানোর ফলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন ছাড়া অন্য কোনো মিডিয়ায় সংবাদটি পাওয়া না গেলেও ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সংবাদটি প্রচার শুরু করে।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) রাত ৮টার দিকে এই ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, একদল মানুষ ওই মন্দির সংলগ্ন একটি দেয়াল ভাঙছে।

“জমি নিয়ে বিরোধের কারণে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটেছে। তারা মূল মন্দিরে হামলা করেনি, তবে মন্দিরের পাশের প্লটের দেয়াল ভেঙেছে,” শুক্রবার বেনারকে বলেন ওয়ারী থানার ওসি কবির হোসেন।

প্রায় দুইশ’ বছরের প্রাচীন দ্বিতল ভবনের ওই মন্দিরটি বর্তমানে পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)।

“হামলাকারীদের সামনে পেলেও” ওসি তাদের গ্রেপ্তার করেননি বলে অভিযোগ করেন ইসকন মুখপাত্র অমানি কৃষ্ণদাস।

তিনি বেনারকে বলেন, “গতকাল রাত দুইটা পর্যন্ত আমরা থানায় ছিলাম। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি মামলা নিতে রাজি হননি। বিভিন্ন স্থান থেকে চাপ আসায় প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর আজ সন্ধ্যায় মামলা নিয়েছেন।”

শুক্রবার করা ইসকনের মামলার এজাহারের একটি কপি বেনারের হাতে এসেছে। সেখানে হাজি মো: সফিউল্লাহ ও তার ছেলে ইসরাফ সুফিসহ ৮০/৯০জন অজ্ঞাতনামাকে মন্দিরে হামলার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তবে ওসি কবির বেনারকে বলেন, “হাজি সফিউল্লার লোকজন যে দেয়ালটি ভেঙেছে সেটি মন্দির সংলগ্ন হলেও হোল্ডিং নাম্বার আলাদা। তারা মন্দিরে হামলা করেনি। এটি একটি পুরাতন পরিত্যক্ত বাড়ি।”

হামলায় এজাহারকারী সুমন্ত চন্দ্র, নীহার হালদার, রাজীব ভদ্রসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

কারণ জমি দখল

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বেনারকে বলেছেন, “মূলত জমির দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা এসেছিল। পুরো মন্দির নয়, মন্দিরের একাংশ তারা নিজেদের বলে দাবি করেছে।”

তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মন্দিরটি সাড়ে ১৬ কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। তার মধ্যে এক কর্নারে দেড় কাঠা জমি মন্দিরের পুরাতন কোনো সেবায়েতের কাছে কিনে নিয়েছিল বলে দাবি করেছেন সফিউল্লাহ। তিনি ও তাঁর লোকজন ওই কর্নারের দেয়াল ভেঙেছে।”

“জমি নিয়ে বিরোধ থাকলেও আদালতের আদেশ ছাড়া এভাবে মন্দিরের দেয়াল ভাঙা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই,” বলেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বৃহত্তম সংগঠনের এই নেতা।

এ বিষয়ে আসামি মো. সফিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আসামিরা পলাতক বলে জানিয়েছেন ওসি কবির হোসেন।

ইসকনের জনসংযোগ কর্মকর্তা অমানি কৃষ্ণদাস বেনারকে জানান, প্রায় ১৭ বছর থেকে ইসকন মন্দিরটি পরিচালনা করছে। ঢাকায় ইসকনের ৭টি মন্দিরের মধ্যে এটি একটি।

তিনি বলেন, “এর আগে আরেক এক ভূমিদস্যু শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরটি দখল করার চেষ্টা করেছিল। এরপর এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় ইসকনকে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দেয়।”

“ইদানীং সফিউল্লাহ নামে আরেকজন ব্যক্তি মন্দিরটির অংশবিশেষ দখলের চেষ্টা করছে। তার কাছে কোনো দলিল নেই, তিনি গায়ের জোর দেখাচ্ছেন,” বলেন তিনি।

“আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু থানার ওসি ওই ভূমিদস্যুর দ্বারা প্রভাবিত,” অভিযোগ করেন অমানি কৃষ্ণদাস।

ভারতের ইসকন এই ঘটনার নিন্দা করেছে এবং এটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছে। ভারতের ইসকন মন্দিরের রাধারমণ দাস টুইটে জানিয়েছেন, “দোল যাত্রা এবং হোলি উদযাপনের প্রাক্কালে এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।”

হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের (এইচএএফ) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ মার্চ রাত ৮ টায় জনৈক সফিউল্লাহর নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ জন দুষ্কৃতকারী ঢাকার ওয়ারী থানার ২২ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ইসকন মন্দিরে হামলা চালায়। এ সময় কমপক্ষে ৩ জন হিন্দু ভক্ত আহত হয়েছে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কর্মরত সংস্থা একেএসের, মতে গত নয় বছরে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর প্রায় ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। ১ হাজার ৬৭৮টি ধর্মীয় উপাসনালয়ে নাশকতা ও সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।