সাম্প্রদায়িক হামলা: গ্রেপ্তার ৪৫০, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.10.19
ঢাকা
সাম্প্রদায়িক হামলা: গ্রেপ্তার ৪৫০, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের উপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকার জাতীয় যাদুঘরের সামনে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী এবং সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ। ১৯ অক্টোবর ২০২১।
[বেনারনিউজ]

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বৈঠকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও রংপুরসহ বিভিন্নস্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে আলোচনা হয় বলেও জানান সচিব।

মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপকেন্দ্রিক অপ্রীতিকর ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭১টি মামলা রুজু করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৪৫০ জনকে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

“বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপর এতো বড়ো আক্রমণ হয়নি,” জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “এটি খুবই দুঃখজনক।” 

তাঁর মতে, “সরকার যদি নাগরিক সমাজের কাছ থেকে দূরে সরে না যেত, তাহলে এ ধরনের আক্রমণ নাও হতে পারত। সরকার মনে করে তারা একাই সব করতে পারে। আর সেকারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।” 

ঢাকায় সম্প্রীতি সমাবেশ

সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ-সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহ। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সম্প্রীতি সমাবেশ ও শান্তি শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে। যতদিন না এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিষদাঁত আমরা ভেঙ্গে দিতে পারব, ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে, রাস্তায় থাকবে।”

মন্ত্রী বলেন, ভারতের মুসলমানদের জানমালের কথাও ভাবতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে ভারতের মুসলমানদের জীবনকেও বিপন্ন করে ফেলা হচ্ছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের সাথে রয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকার শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ জানিয়েছে বেশ কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। 

যুক্তরাষ্ট্রের সমবেদনা

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের শিকার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মঙ্গলবার মার্কিন দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সমবেদনা জানান হয়।

এতে বলা হয়, “যেসব পরিবার সাম্প্রতিক ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।”

“ধর্ম পালনের স্বাধীনতা পবিত্র। আমাদের সবাইকে লক্ষ্য-নির্দিষ্ট সহিংসতা এবং পরিকল্পিত ঘৃণার বিরুদ্ধে অবিচল থাকতে হবে এবং সহিংসতার কোনো ভয় ছাড়াই প্রত্যেকে যেন নিজ নিজ বিশ্বাসের ধর্মীয় আচার বা উৎসবে অংশ নিতে পারেন-তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে,” বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া প্রচারক সাদ হামাদি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির, পূজামণ্ডপে আক্রমণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

তিনি বলেন, বার বার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে আক্রমণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

কলকাতায় প্রতিবাদ

গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। কলকাতার ধর্মতলায় সবচেয়ে বড়ো মিছিল ও জমায়েত করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

ভারত সেবাশ্রম সংঘের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতিদের যথাযথ শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। 

বাংলার বিশিষ্টজনেরা সম্প্রীতি রক্ষায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সকলকে সংযত থাকা আবেদন জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় সকলকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ‍্য ও ভিডিও প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলেছে।

পীরগঞ্জে হামলা পরিকল্পিত: স্পিকার

গত বুধবার কুমিল্লায় একটি পূজা মণ্ডপ থেকে কোরান শরীফ উদ্ধারের ঘটনায় সেখানকার পূজা মণ্ডপ ভাঙচুর করে স্থানীয় উগ্রপন্থী মুসলমানেরা। কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে বুধবার চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে চারজন মুসলিম নিহত হন।

গত শুক্রবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে উগ্রপন্থী মুসল্লিদের হামলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) দুজন ভক্ত নিহত হয়েছেন।

একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জেলে পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৩০টি বাড়িঘর ভাঙচুর চালায় উগ্রপন্থীরা। মঙ্গলবার পীরগঞ্জ সফরে যান স্থানীয় সাংসদ ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পর স্পিকার বেনারকে বলেন, “এই হামলা পরিকল্পিত। আক্রমণকারীরা স্থানীয় নয়। তারা গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থেকে পীরগঞ্জ এসে আক্রমণ পরিচালনা করেছে। পীরগঞ্জের এক ইমাম এই ঘটনার পর থেকে পালিয়ে আছে।”

“সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে,” বলেন স্পিকার।

কলকাতা দিয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন পরিতোষ পাল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।